শিরোনাম
◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:৩১ সকাল
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০১৯, ০৭:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বৃটিশ বিরোধী টংক প্রথা উচ্ছেদ আন্দোলনের অগ্নিকন্যা হাজংমাতা রাশিমনি

শাহীন খন্দকার : শাহীন খন্দকার : টঙ্ক আন্দোলনের  প্রথম শহীদ নারী রাশিমনি হাজং। রাশিমনি হাজংয়ের পূর্বপুরুষ আসামের অধিবাসী ছিলেন। সুসং রাজ্য স্থাপনের পর সুসং এর জমিদাররা আসাম থেকে তাদের নিয়ে আসেন। তাদেরকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার পেছনে জমিদারদের কারণ ছিল। হাজংরা ছিলেন সৎ,সাহসী, বিশ্বস্ত। ফলে যে কোন আক্রমণ রোধে তাদের ব্যবহার করা যেত। জমিদারী  প্রথার উচ্ছেদ চাই, জমি যার, লঙ্গল তার’স্লোগানে ‘জান দিব তবু ধান দিব না, আন্দোলনের অগ্নিকন্য রাশিমনির জন্ম হয় ১৮৯৭ সালের মে মাসে।ময়মনসিংহ জেলার সুসঙ্গ পরগনার ভেদিপুরা অঞ্চলের বগাবারী এক গরীব হাজং পরিবারে। প্রাতিষ্টানিক শিক্ষার সুযোগ হয়নি তার। ১২ বছর বয়সে রাশিমনিকে এক নিঃস্ব যুবকের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরেই বিধবা হন। জনশ্রæতি রয়েছে হাজং পাড়ায় ডাইনী বলে ক্ষেপাতো প্রতিবেশী। রাশিমনি এতে হাল ছেড়ে দেননি। অন্যের জমিতে ধান বুনে, ধান কেটে কখনো বন থেকে কাঠ কুড়িয়ে বিক্রি কওে জীবিকা করতেন।

১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারী  বিরিশিরি থেকে ৪ মাইল উত্তর-পশ্চিমে বহেরাতলী গ্রামে কেবল ভোরের আলো পাহাড়ী জনপদে আবির ছড়িয়ে দিয়েছে। সকাল ১০ টার দিকে বৃটিশ ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর দল টঙ্কো বিরোধী লংকেশ্বর হাজংএর বাড়ীতে হানা দেয়। টঙ্কো বিরোধীনেতাদের না পেয়ে অষ্টাদশী গৃহবধু কুমুদিনী হাজং কে বৃটিশ ক্যাম্পে নেওয়ার পথে, এই খবর পাহাড়ী জনপদের চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। রাশিমনি হাজংয়ের নের্তৃত্বে  শতশত হাজং নারী পুরুষ বৃটিশ পুলিশ বাহিনীকে ঘিরে ফেলে ও কুমুদিনী হাজংকে উদ্ধারের জন্য।

ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার  রাইফেল বাহিনীর সেনারা হাজং গ্রামবাসির কথা কর্ণপাত না করে  ক্যাম্পের  দিকে যেতে থাকে। রাশিমনি হাজং তাঁর সঙ্গি মহিলাদের নিয়ে কুমুদিনী হাজংকে উদ্ধারে রামদা হাতে  আক্রমন করে বৃটিশ পুলিশের কয়েকজনকে হত্যা করেন। পুলিশও পাল্টা তাঁদের ওপর গুলি চালায়। এতে শহীদ হন হাজং মাতা রশিমনি হাজং। সুরেন্দ্র হাজংসহ বেশ কয়েকজন, এই আন্দোলনের আরেক  নেতা ললিত সরকারের বাড়ীতে আগুন  দেয়। ১৯ জন বিদ্রোহী নিহত হন। গ্রেফপ্তার হন অনেকে। এর মধ্যে অশ্বমণি ও ভদ্রমণি হাজং এর ১২ বছর করে  জেল হয়। ২৮ র্ফেরুয়ারী দু’জন বন্ধুকধারী সিপাইকে বিপ্লবী কৃষকেরা ভালকা পাড়া গির্জার সামনে হত্যা করে। ঐ বছরেরই ৩১শে ডিসেম্বর দুর্গাপুরের বহেরাদলী গ্রামে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালায় ।

১৯৪৯ সালের ১৫ কলমাকান্দা থানার বটতলায় ২০ মণ টংক ধান আটক করে কৃষকেরা। ২৬ ফ্রেরুয়াারি চৈতন্যনগরে জমিদারের কাঁচারী দখল করে উত্তেজিত কৃষকেরা। পুড়িয়ে দেয় জমিদারদের প্রয়োজনিয় সব কাগজ পত্র। অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে হাজং সম্প্রদায়ের উপর। এই আন্দোলনে বহু  নেতা  প্রাণ হারান। এবং কৃষকেরা তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে আসেন। টঙ্ক আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিলো গুরুত্বপূর্ন।

দুর্গাপুর থানার কুল্লাপাড়া ইউনিয়নের আরাপাড়া গ্রামের পাঞ্জি হাজংকে বিয়ে করেন। পাঞ্জি হাজং কবিরাজ ছিলেন। রাশিমনিকে তিনি কিছু কিছু কবিরাজী বিদ্যা শেখান। রাসমনি নিজে আবার ধাত্রী জ্ঞানে পারদর্শী ছিলেন। সেসময় আশেপাশের নারীদের রোগের চিকিৎসা কিংবা প্রসবে সহায়তা করতেন। নারী সমাজে তার জনপ্রিয়তাও ছিল সেজন্যে। ১৯৩৭ সালমনি সিং এর নেতৃত্বে রাসমনি টঙ্ক আন্দোলনে যোগ দেন। টঙ্ক আন্দোলন হচ্ছে ব্রিটিশ-ভারতে সর্বশেষ গণ আন্দোলন। সুসং দুর্গাপুরে এর ঘাঁটি। টঙ্ক মানে হল ধান কড়ারী খাজনা। এই ব্যবস্থায় জমিতে ধান হোক কিংবা না হোক, কৃষকের জমিদারকে ধান দিতেই হবে। টঙ্কের কারণে চাষীদেরকে  প্রতি একরে বাড়তি খাজনা দিতে হত। শুধু যে বাড়তি খাজনা ছিল তা নয়। জোত স্বত্ত জমি নিতে হলে চাষীদেরকে বেশ বড় অংকের একটা টাকা নজরানা দিতে হত। টঙ্কের হারও চাষীদের নাগালের বাইরে কখনই ছিল না। বেশি মুনাফার আশায় জমির মালিকরা নিলাম ডাকতো। নিলামে যে বেশি ধান করতে পারত তাকেই দেওয়া হত। এভাবেই  আস্তে আস্তে টঙ্কের দাম বেড়ে চলছিল।

এদিকে ১৯৩৮ সাল হাজং চাষীরা টঙ্ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ করতে শুরু করে। এই আন্দোলনের অগ্রভাগ থেকে নেতৃত্ব দেন মনি সিং। ১৯৪০ সালে এই আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করে। সেই বছরেই সার্ভে করে টঙ্ক ব্যবস্থার পরিমান কমানো হয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার টঙ্ক ব্যবস্থার সংস্কার করলেও পুরোপুরি নির্মূল করেনি। টঙ্ক ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার জন্য আন্দোলন চলতে থাকে।

১৯৫০ সনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন সুসং দুর্গাপুর এলাকায় আসেন ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। কিন্তু টঙ্ক  প্রথা না ১৯৪৬ সালের দিকে টঙ্ক প্রথা বিলোপের আন্দোলনের সংগে সংগে জমিদারী  প্রথা বিলোপ আন্দোলন ও শুরু হয়ে যায়।

টঙ্ক আন্দোলন,তেভাগা, নানকার, নাচোল কৃষক আন্দোলনের মতো এটিও ছিলো কৃষকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বৃহত্তর ময়মনসিংহ তথা নেত্রকোনা , ময়মনসিংহ এবং শেরপুর  জেলার বিভিন্ন স্থানে টঙ্ক প্রথা চলে আসছিলো। ১৯৫০ সালে টঙ্ক প্রথা ও জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সমাপ্তি হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়