ডেস্ক রিপোর্ট : বিদ্যুতের দাম বাড়াতে সঞ্চালন ও বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব পেয়ে গণশুনানির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ছয় মাসের মধ্যেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন জমা পড়ল বিইআরসিতে; আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হবে তা নিয়ে গণশুনানি। বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পরিচালন ও জনবল বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন ও সরঞ্জামের মূল্য বৃদ্ধিকে কারণ দেখিয়েছে কোম্পানিগুলো। বিতরণকারী বা খুচরা বিক্রেতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডেসকো, ডিপিডিসি, ওজোপাডিকো ও নেসকো দাম বাড়ানোর আবেদন করলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাইকারি দাম না বাড়লে তাদের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।বিডিনিউজ
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও পরিচালন ব্যয় বাড়ার ফলে লোকসানের ফর্দ নিয়ে গত ১৫ অক্টোবর বিইআরসির দ্বারস্থ হয় বিদ্যুতের একমাত্র পাইকারি বিক্রেতা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ওই প্রস্তাব দৃশ্যত দাম বাড়ানোরই প্রস্তাব। আর একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে আরও বেশি হুইলিং চার্জ দাবি করে আবেদন করেছে বিইআরসিতে, যা আরেক ধাপে খুচরা মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
পিজিসিবি বিভিন্ন ভোল্টেজ লেভেলে দাম বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করেছে। বিতরণ সংস্থা ডেসকো ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ হারে দাম বাড়াতে চাচ্ছে। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সুনির্দিষ্ট কোনো দাম প্রস্তাব করেনি।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ায় সরকার। আর চলতি বছরের ৩০ জুন গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি।
এসব আবেদন নিয়ে গণশুনানির গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিইআরসি। তা অনুসারে আগামী ২৮ নভেম্বর পাইকারি মূল্যহার ও সঞ্চালন মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবের উপর শুনানি হবে।
এরপর ১ ডিসেম্বর পিডিবি ও নেসকোর খুচরা মূল্যহার পরিবর্তনের ওপর শুনানি হবে। ২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসি ও ডেসকোর আবেদনের উপর শুনানি হবে। ৩ ডিসেম্বর ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতের প্রস্তাবের উপর শুনানি হবে।
পিডিবির হিসাবে আরইবি ৪৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বিদ্যুৎ বিতরণ করে। এছাড়া পিডিবি ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ডিপিডিসি ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ডেসকো ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ, নেসকো ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ওজোপাডিকো ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ বিতরণ করে থাকে।
এর আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর হরতাল ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাম দলগুলো (ফাইল ছবি) এর আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর হরতাল ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাম দলগুলো (ফাইল ছবি)
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবে যে কারণ দেখানো হয়েছে, তাকে ‘অযৌক্তিক’ বলছেন ভোক্তা অধিকার রক্ষার নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম।
তিনি বলেন, “কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয় ও দুর্নীতি কমানোর পথগুলো আগেও দেখিয়েছি। এই ইস্যুতে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব অযৌক্তিক।’“পাইকারিতেও দাম বৃদ্ধির সুযোগ নেই, তবুও প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ২০১৫ সালে হুইলিং চার্জ ১৮ পয়সা বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। শুনানিতে আমরা এসব প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তি তুলে ধরব,” বলেন তিনি।
বেলে প্রতি ইউনিট সঞ্চালন চার্জ শূন্য দশমিক ২৭৯১ টাকা রয়েছে। নতুন করে আগামী জানুয়ারি থেকে বর্তমানে সঞ্চালন চার্জ ২৩০ কেভি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট শূন্য দশমিক ৪১৬৬ টাকা, ১৩২ কেভি লেবেলে প্রতি ইউনিট সঞ্চালন চার্জ শূন্য দশমিক ৪২০২ টাকা, ৩৩ কেভিতে লেবেলে প্রতি ইউনিট সঞ্চালন চার্জ শূন্য দশমিক ৪২৩৭ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :