টিভিএনএ রিপোর্ট : এটিএম শামসুজ্জামান বাংলা চলচ্চিত্রের গুণী অভিনেতা।১৯৬১ সাল থেকে অভিনয় করে যাচ্ছেন।দীর্ঘ অসুস্থতার পর এখন বাসায় আছেন।তবে শিগগির আবারও অভিনয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন।চিকিৎসার সুবিধার জন্য বর্তমানে পুরান ঢাকায় নিজের বাসা ছেড়ে এখন অবস্থান করছেন বসুন্ধরায় মেয়ের বাসায়।সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থা ও তার কর্মময় জীবন নিয়ে কথা হয়।দর্শকদের জন্য তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: আপনার বাবা চেয়েছিলেন তার মতো আপনিও যেন অ্যাডভোকেট হন। কিন্তু আপনি অভিনেতা হয়েছেন। আপনি কী মনে করেন যে, আপনার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো?
এটিএম শামসুজ্জামান: আমি মনে করি আমার সিদ্ধান্ত শতভাগ ঠিক ছিলো।বাবা চেয়েছিলেন আমি যেনো আইনজীবী হই। কিন্তু হয়েছি অভিনেতা। জীবনের এই পড়ন্ত সময়ে এসে মনে করি আমার সিদ্ধান্তই ঠিক ছিলো।অভিনেতা হয়েছি বলেই সারা দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।মানুষ দোয়া করে, ভালোবাসে।মানুষের ভালোবাসাইতো জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
তবে অভিনেতা হলেও আমার কিন্তু ইচ্ছা ছিলো ফিল্ম ডিরেক্টর হওয়ার।এজন্য বিখ্যাত পরিচালক জহির রায়হান, খান আতা, কাজী জহির, কামাল আহমেদ ও সুভাষ দত্তর মতো গুণী পরিচালকদের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি।সুভাষ দত্তের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো।শুধু সিনেমার বিষয়েই নয়, ব্যক্তিগত পারিবারিক সব বিষয়েই তার সঙ্গে শেয়ার করেছি।পরিচালক হতে অনেক টাকারও প্রয়োজন।আমার এতো টাকা ছিল না বলে আমিও তা হতে পারিনি।
প্রশ্ন: অভিনয় জীবনের পেছনে সবচেয়ে বেশি কার অবদান রয়েছে?
এটিএম শামসুজ্জামান: অভিনয় করি বলে বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন।মানুষের বাড়িতে থেকে খেয়ে মানুষ হয়েছি।পুরান ঢাকার একজন মহিলা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, তিনি লেখাপড়া জানতেন না, তবে অভিনয়কে ভীষণ ভালোবাসতেন।আমি যত রাতেই বাড়ি ফিরেছি তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন।যেদিন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরষ্কার পাই সেদিন আমার দুই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়েছে, কারণ আমি পুরষ্কারটি তার পায়ের নিচে রাখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তার আগেই তিনি চির বিদায় নিয়েছেন।আমার জীবনে তার অবদান ভুলতে পারবো না।
প্রশ্ন: অপনার অভিনয়ে বিশেষত্ব কী?
এটিএম শামসুজ্জামা: বাংলা চলচ্চিত্রে ভিলেনের অভিনয় আগেও ছিল কিন্তু আমি কমেডি ভিলেনের ধারা চালু করি, যেটি সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই গ্রহণ করে।একবার ভারতের একজন সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করে যে, আপনি কাদির খানকে অনুসরণ করেন? আমি বললাম কাদির খান অভিনয় শুরু করেছেন আসির দশকে।আর আমি অভিনয় শুরু করি ৬১ সাল থেকে। আমার দেশটা ছোট বলে আপনি এই প্রশ্নটি করে দিলেন।আমাদের কারো সাথে কোনোদিন দেখা হয়নি।
প্রশ্ন: চলচিত্র জগতে এখন শিল্পীদের মাঝে সহমর্মীতা কম দেখা যায় কেন?
এটিএম শামসুজ্জামান: বর্তমান চলচ্চিত্র অঙ্গনে পারষ্পরিক সহমর্মীতা না থাকার পেছনে শিক্ষার অভাব রয়েছে।প্রতিটি শিল্পীকেই পড়ালেখা করতে হবে।আমার মনে হয় এখন তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে।তিনি বলেন, এখনকার শিল্পীরা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে বলেই তাদের মাঝে সদভাব নেই। এছাড়া এখন নায়িকার দেহ ও নায়কের চোখ নিয়েই আলোচনা।ভালো অভিনয় করা ও শেখার বিষয়ে তাদের আগ্রহ কম।ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, কাজের অপর নাম প্রেম।যিনি যে কাজটি করবেন যদি প্রেম ভালোবাসার সাথে করেন তাহলে সফলতা আসবে। অর্থের পেছনে না ছুটে কাজের পেছনে ছুটতে হবে।কাজ ভালো হলে অর্থ এমনিতেই ধরা দেবে।
আপনার মতামত লিখুন :