মাজহারুল ইসলাম : দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড বা পাতালরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ লাইনের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে। এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের নক্সার কাজ চূড়ান্ত হচ্ছে। আগামী বছর এর আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সয়েল টেস্ট। জনকণ্ঠ
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য উন্নত শহরের আদলে প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাজ শেষ হলে বদলে যাবে গোটা ঢাকা শহরের চিত্র। এখন যা সত্যিই কল্পনার জায়গায় তা সত্যি হয়ে সামনে আসবে কয়েক বছরের মধ্যেই। এক সময় আন্ডারগ্রাউন্ড রেললাইন নির্মাণের জন্য সরকার কাজ শুরু করলেও ইউটিলিটি সার্ভিসের কারণে তা থেকে সরে আসে।
রাজধানীর কুড়িল বসুন্ধরা বাড্ডাসহ আশপাশের এলাকায় এমআরটি-১ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরুর আগে মাটি পরীক্ষা চলছে। অন্যান্য প্রকল্প থেকে এটি ব্যতিক্রম। তাই গভীর পর্যন্ত মাটি পরীক্ষা করা হবে। ধারাবাহিকভাবে চলবে মাটি পরীক্ষার কাজ।
কর্মকর্তারা জানান, যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের বেশকিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এরমধ্যে নক্সা, জমি অধিগ্রহণ, মাটি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কাজ চলমান। ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনের দুটি অংশ রয়েছে। এর একটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার। এই লাইনে স্টেশন সংখ্যা হবে ১২টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচারপার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।
নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত অপর লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার। এই লাইনে ৯টি স্টেশনের মধ্যে রয়েছে নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল সেক্টর-৭ ও পূর্বাচল ডিপো।
এরই মধ্যে এই রুটের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিভিন্ন সার্ভে শেষ হয়েছে। মূল নক্সা প্রণয়নের ৭০ ভাগের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ রুটের নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের মধ্যে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রুটের একটি অংশের ৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি গত ২৯ মে জাপান সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাতাল রেল নির্মাণে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ৫০ ফুটের বেশি গভীরে প্রতিটি টার্মিনাল হবে দৃষ্টিনন্দন। মাটির নিচে তিন তলার বেশি জায়গা নেয়া হবে। ওঠা-নামার জন্য থাকবে এসকালেটর ও লিফটের ব্যবস্থা। স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে ট্রেনের দরজা। আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে পৃথক পৃথক প্লাটফরম। র্যা পিড পাসের মাধ্যমে যাত্রীরা সপ্তাহ কিংবা মাসিক ভিত্তিতে টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। উপস্থিত যাত্রীদের জন্য থাকবে আলাদা টিকেটের ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, শুধু পাতাল রেল এমআরটি লাইন-এক বা উড়াল মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই যানজট শেষ হবে না। যানজট নিরসনে প্রস্তাবিত ৬টি এমআরটি লাইনের পুরোপুরি কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে উড়াল পথের পাশাপাশি পাতাল পথও থাকছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এর পুরো কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি সবকটি লাইনের কাজ শেষ হলে নগরীর যানজট সমস্যা অনেকটাই সমাধান হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সিদ্দিক বলেন, উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণের পাশাপাশি পাতাল মেট্রোরেলও নির্মাণ করা হবে। এমআরটি লাইন ১, ২, ৪ ও ৫-এ উড়াল পথের পাশাপাশি পাতাল পথও থাকছে।
এমআই/এসবি
আপনার মতামত লিখুন :