আনিস তপন : নতুন ও টেকসই প্রকৌশল প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী ব্যক্তি ও সংস্থাকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি ও পুরস্কার দেয়ার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল গবেষণা কাউন্সিল আইন, ২০১৯’ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। যা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঠিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আইনের খসড়ায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কাজগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন, গবেষণায় পাওয়া ফলাফল বানিজ্যিকীকরণসহ আমদানি করা প্রযুক্তি গ্রহণ, আত্মীকরণ ও অভিযোজনের জন্য প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে একটি প্রকৌশল কাউন্সিল গঠনের লক্ষ্যে এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে।’
‘এই কাউন্সিল জাতীয় প্রয়োজন অনুসারে প্রকৌশল বিজ্ঞানের যেমন, পূর্ত, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিকসহ সকল প্রকার অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, প্ল্যান্ট, ডিভাইস এবং মালামালের নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ, উৎপাদন, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি গুণগত মান নির্ধারণ করবে। টেকসই জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিতে শিল্প, শক্তি, কৃষি, খনিজসম্পদ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, পরিবহন ও সেবাসহ প্রকৌশলের সব সেক্টওে পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিদ্যার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে দেশে উদ্ভাবিত প্রকৌশল পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেশের উন্নয়নসহ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, অভিযোজন, হস্তান্তর ও আত্মীকরণে উৎসাহিত করবে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেষাগত দক্ষতার উন্নয়ন এবং উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রকৌশল ও প্রযুক্তির মেধাস্বত্ব অধিকার অর্জন ও সংরক্ষণে সহায়তা করবে। তাছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে যথোপযোগী প্রকৌশল পদ্ধতির উদ্ভাবন, প্রয়োগ, বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সমন্বয় সাধনের সঙ্গে সঙ্গে গবেষণার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সে অনুসারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকৌশল গবেষণা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও পরিকল্পনা এবং এর সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নসহ প্রকৌশল জ্ঞান চর্চা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত আধুনিক প্রকৌশল জ্ঞানের সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করবে কউন্সিল। একই সঙ্গে প্রকৌশল পরীক্ষাগার ও গবেষণাগার স্থাপনসহ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থেও সংস্থান এবং গবেষণার ফলাফল যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৌশল খাতের উন্নয়নে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবে।’ ‘কাউন্সিল প্রকৌশল বিষয়ক সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রাখবে’- বলা হয়েছে খসড়ায়।
কাউন্সিল পরিচালনায় ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি গভর্নিং বডি থাকবে উল্লেখ করে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী হবেন চেয়ারম্যান।’ প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘তার প্রকৌশল বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিসহ প্রকৌশল পেশায় অন্যূন ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা এবং স্বীকৃত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা থাকতে হবে। গভর্নিং বডির মেয়াদ হবে তিন বছর। উপসচিব বা সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তিকে সরকার কাউন্সিলের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেবে। তাছাড়া কাউন্সিলের একটি উপদেষ্টা পরিষদও থাকবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রীকে প্রধান করে ১১ সদস্যের এই উপদেষ্টা পরিষদ প্রকৌশল গবেষণা সম্পর্কিত নতুন কোনো প্রস্তাব প্রণয়নে পরামর্শ প্রদান, গবেষণা সম্পর্কিত যেকোনো প্রস্তাব পর্যালোচনাসহ এসব বিষয়ে গভর্নিং বডিকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবে। একই সঙ্গে কাউন্সিলের কাজ সুচারুরূপে সম্পাদন, গবেষণা কাজ পরিচালনা বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ, সুপারিশ বা সহায়তা দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, পেষাজীবী, শিল্প উদ্যোক্তা বা শিক্ষাবিদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করতে পারবে।’
সরকারের দেয়া মঞ্জুরি বা অনুদান, বিদেশি কোনো ব্যক্তি, সরকার বা সংস্থা বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা থেকে অনুদান বা ঋণ, গবেষণাস্বত্ব ও সেবা হতে আয়, কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের দেয়া অনুদান, কাউন্সিলের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা ও সম্পদ থেকে উদ্বৃত্ত আয় দিয়ে এর তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে খসড়ায়।
‘কাউন্সিল প্রয়োজনে কোনো বানিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা দেশি-বিদেশি অন্য কোনো উৎস্য থেকে ঋণ নিতে পারবে। এ ঋণ পরিশোধের জন্য তারাই দায়ী থাকবে’- বলা হয়েছে আইনে।
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়
আপনার মতামত লিখুন :