শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ অক্টোবর, ২০১৯, ০৬:০৬ সকাল
আপডেট : ১৩ অক্টোবর, ২০১৯, ০৬:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিতর্কিতদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান আওয়ামী লীগের

@ যত বড় নেতা হোক না কেন অপরাধ করলে কেউ ছাড় পাবে না, বললেন অ্যাড.ইউসুফ হোসেন হমায়ুন
@ যারা বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন আগামী কাউন্সিলে কমিটিতে তাদের ঠাঁই নেই, বললেন বি এম মোজাম্মেল হক

রফিক আহমেদ: বিতর্কিত সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-এমপি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীণ দল আওয়ামী লীগ। গত উপজেলা নির্বাচনে যারা নৌকার বিরোধিতা করেছে এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দল বিভিন্ন সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে তাদের বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় সরকারি এ দলটি। ইতোমধ্যে নজিরবিহীন শুদ্ধি অভিযান শুরুর মধ্যদিয়ে কঠোর অবস্থানের বিষয়টি জানান দিয়েছে তারা।

শুধু তাই নয়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বেশ কয়েক জনকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেকেই নজরদারিতে আছেন। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ এবং এর আগে সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই কাউন্সিলে বিতর্কিত নেতা-মন্ত্রীরা যাতে কোনোভাবেই ঠাঁই না পায় সে ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, শুধু উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নয়, এর আগে যারা ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে বিরোধিতা করেছেন এবং বিভিন্ন দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন এমন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা যেই হোক না কেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছেন। শুদ্ধি অভিযান সেজন্যই পরিচালিত হচ্ছে। কোনো দুর্নীতিবাজই ছাড় পাবে না।

দলীয় সূত্র জানায়, গত উপজেলা নির্বাচনে চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ অর্ধশতাধিক এমপির বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। ঢাকার পার্শ্ববর্তী এক জেলার সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রী নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। মন্ত্রী-এমপিদের সমর্থনের ফলে ১৩৬টি উপজেলায় জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তারা স্থানীয়ভাবেই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের লোক বলেই পরিচিত।

তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও তার ছেলে দীপু চৌধুরীর বিরুদ্ধে টিআরকাবিখার দুর্নীতি, নিয়োগবাণিজ্য, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করা এবং মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ আছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের। গত বছর এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দীপু চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ ইতোমধ্যে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে মায়া চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার সঙ্গে জামাতা ও ছেলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বেশ চাপের মুখে পড়েন। আদাবর থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো: মনিরুজ্জামান, কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবসহ বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীর অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা উদ্যানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। অভিযোগ আছে, মনিরুজ্জামান ও তারেকুজ্জামান রাজীবের মতো অনেকেই দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। যার ফলে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা ছিটকে পড়েছেন। অনেকেই অভিমানে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে ক্যাসিনো চালানো এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সম্প্রতি সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত শুক্রবার যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে ও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নেতা জি কে শামীমকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে ইতোমধ্যে সাবেক আটজন মন্ত্রীসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিন আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের একটি বড় তালিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে আছে। প্রধানমন্ত্রী সেগুলো নিজস্ব সোর্স দিয়ে যাচাই-বাছাই করছেন। আগামী কাউন্সিলে ওই সব দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকর্মী এবং এদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতারা কোনোভাবেই কমিটিতে স্থান না পায় সে ব্যাপারে কঠোর নীতি অবলম্বন করছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত আছে। এ জন্য শুদ্ধি অভিযানও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, যারা বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন আগামী কাউন্সিলে কমিটিতে তাদের ঠাঁই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা কেন্দ্রে হোক বা ঢাকা মহানগরে হোক, কোনো কমিটিতে তারা স্থান পাবে না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হমায়ুন বলেন, মন্ত্রী-এমপি বা যেকোনো পর্যায়ের যত বড় নেতা হোক না কেন অপরাধ করলে কেউ ছাড় পাবে না। ইতোমধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিসহ কোনো অপরাধকে কোনো দিন প্রশ্রয় দেননি। বিশেষ করে দুর্নীতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রয়েছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। সম্পাদনা: জান্নাতুল পান্না

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়