ইসমাঈল হুসাইন ইমু : আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহার ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ৬ অক্টোবর রাত ৮টা ৫ মিনিটের দিকে আবরারকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পরের দিন রাত আড়াইটা পর্যন্ত হলের ২০১১ এবং ২০০৫ নম্বর কক্ষে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্ট্যাম্প এবং লাঠি-সোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচন্ড মারধর করা হয়। ঘটনাস্থলে আবরারের মৃত্যু হয়। আবরারের মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে তার মৃতদেহ ফেলে রাখে। পরে কিছু ছেলে আবরারের মৃতদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আবেদনে বলা হয়, মামলার তদন্তকালে সাক্ষ্য প্রমাণে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামিদের মামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার সম্পর্কে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্তকালে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ক্রিকেট স্ট্যাম্প, স্কিপিং রোপসহ আরো অনেক আলামত জব্দ করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে অমিত সাহা এবং তোহার নাম প্রকাশ করেছে।
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মূল রহস্য উদঘাটন, অন্যান্য সহযোগী, এজাহার বর্হিভূত পলাতক আসামিদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য, কোন হুকুমদাতা থাকলে তাদের সনাক্ত করার জন্য এবং কি কারণে আসামিরা এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সকল তথ্য জানার জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে মামলার বাদী এবং সাক্ষীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে বা যেকোনো ভাবে প্রভাবিত করে মামলার তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। জামিন নামঞ্জুর করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের কারাগারে আটক রাখার প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, শেরেবাংলা হলের ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর রুম দুটি ছিল টর্চার সেল। আসামিদের উপস্থিতিতে আবরারকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। বুয়েট থেকে আবরার বিশ্বমানের ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবে এমন প্রত্যাশা ছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু সম্ভাবনাময় একটা ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আমি আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করলাম।
আসামি তোহার পক্ষে তার আইনজীবী আইয়ুব হোসেন রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, তোহা ভিকটিমের ক্লোজ ফ্রেন্ড। তোহা বের হয়ে দেখছিল কি হচ্ছে। কিন্তু সে তাও দেখতে পারেনি। শুধু ভিডিও ফুটেজে দেখা যাওয়ায় তাকে আসামি করা হয়েছে। তোহাকে আসামি নয় সাক্ষী হিসেবে মামলায় রাখা যেতে পারে। তার রিমান্ড নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। অমিত সাহার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
আপনার মতামত লিখুন :