শিরোনাম

প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৩৪ দুপুর
আপডেট : ১১ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৩৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রশাসনিক কাজে অপটু হলেও বিদেশ ভ্রমণে রেকর্ড করেছেন বুয়েট ভিসি

মাজহারুল ইসলাম : ড. সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আড়াই বছরে বিদেশ সফর করেছেন অন্তত ২২ বার। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলেও ভিসি কার্যালয়ে আসেন দুপুরে। তার অদক্ষতা  ও ব্যর্থতায় মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তারা বলছেন, ভিসির স্বেচ্ছাচারিতার জন্য ভেঙে পড়েছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা। মানবজমিন

একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলাও এখন প্রশ্নের মুখে। আবরার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বুয়েট নিয়ে সারা বিশ্বে যে বার্তা পৌঁছেছে তার পরিণতি আরও দীর্ঘ দিন ভোগ করতে হবে। আর এর পুরো দায় ভিসি ড. সাইফুল ইসলামের। গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শিক্ষার্থী আবরারকে। রাত আটটা থেকে দুইটা পর্যন্ত চলে তার ওপর নির্যাতন। রাত দুইটায় আবরারের নিথর দেহ বাইরে ফেলে রাখে খুনিরা। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। চিকিৎসক এসে জানান, আবরার আর বেঁচে নেই। তারা ভিসিকে ফোনে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ড. সাইফুল সন্তানতুল্য ছাত্রটির জন্য ঘটনাস্থলে আসার গরজ অনুভব করেননি। সেদিন রাত পেরিয়ে সকাল হলেও ঘুম ভাঙেনি ভিসি সাইফুল ইসলামের। ক্যাম্পাসের প্রিয় মুখটির জানাজায় যখন সারিবদ্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তখনও গরহাজির তিনি। নানা সূত্র থেকে বলা হলো তিনি অসুস্থ তাই বাইরে আসতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মুখেও এমনটি শোনা গেল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জনসমক্ষে ওই দিনই দাবি করেন ভিসি অসুস্থ নন।

একজন বিনয়ী, মেধাবী শিক্ষার্থীর এমন নিষ্ঠুর মৃত্যুতে নাড়া দিয়েছে প্রতিটি হৃদয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার দিন সকাল থেকেই ঘটনার খোঁজ খবর নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ভিসির রহস্যময় নিরবতায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঘটনার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ভিসি ক্যাম্পাসে প্রকাশ হন। শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তিনি নিজেই জানান, অসুস্থ ছিলেন না বরং মন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তিনি এই সময় কাটিয়েছেন। মুখে না বললেও এ কারণেই যে তিনি ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি এটিই তিনি ইঙ্গিত করেন।

এরপর বুধবার তড়িঘড়ি করে তিনি রওনা দিলেন কুষ্টিয়া। আবরারের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে। কিন্তু সে সুযোগ তাকে দিলেন না রায়ডাঙ্গা গ্রামের মানুষ। প্রতিবাদে সোচ্চার মানুষের বাধায় ঢাকায় ফিরতে বাধ্য হন ভিসি। কিন্তু তার এই আগমনে লঙ্কাকাণ্ড ঘটায় পুলিশ। লাঠিচার্জে আহত হন আবরারের ভাই ফায়াজ, তার এক আত্মীয়সহ কয়েকজন। এতো ঘটনার রেশ ধরেই বুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কিন্তু বুয়েটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভিসি কোন অন্যায় করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ বলেন, বুয়েটে এমন পরিস্থিতি এক দিনে আসেনি। আগে যদি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতো, তাহলে আজকের পরিস্থিতি দেখতে হতো না।

এদিকে গত ১৩ই জুলাই শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বেশির ভাগ ফাইল সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এক থেকে দুই বছর পড়ে থাকে। প্রভাষক নিয়োগ দিতে সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়। ভিসি নিয়মিতভাবে দুপুর সাড়ে ১২টার পর অফিসে আসেন। একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয় না। সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১৪টি সিন্ডিকেট সভা হয়েছে। তাঁর প্রশাসনিক অদক্ষতায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকার তহবিল ফেরত যায়। তাঁরই অন্যায্য সিদ্ধান্তে ২১ জন শিক্ষক ও ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন আটকে যায়। হাইকোর্ট, আপিল বিভাগে ও রিভিউতে হেরে যাওয়ার পরও তিনি সহজে রায় মেনে নিতে চাননি। ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সমিতির সভার রেজুলেশনেও এমন অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়। শিক্ষকদের দাবি ভিসি আড়াই বছরে অন্তত ২২ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

বুয়েট এ্যালামনাইর দাবি একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেরকে দেড় মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাকে ওই অনুষ্ঠানে অতিথি করা হলেও তিনি জাননি। বুয়েট এ্যলামনাইর বর্তমান সভাপতি প্রখ্যাত স্থপতি ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি এ ঘটনার বিষয়ে চরম বিরক্তি ও খেদ প্রকাশ করেন তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে। বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা ও বুয়েট এ্যালামনাইর সদস্য আবুল হায়াতও ভিসির বিষয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানান। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সাবেক এই ছাত্র বলেন, আমরা যখন বুয়েটে পড়েছি তখনকার পরিবেশ এমন ছিলো না। আমরা যখন আন্দোলন করতাম তখন ভিসি এসে আমাদের সামনে বসে থাকতেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসতেন। কারণ তিনি আমাদেরকে নিজের সন্তানের মত মনে করতেন। আর আজকের ভিসি। আমার সন্তান মারা যাওয়ার খবর শুনে আমি যাবো না সেখানে। এর চেয়ে অবাক করার ঘটনাতো আর কিছু হতে পারে না।

এমআই/এসবি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়