শিরোনাম
◈ পঞ্চগড় এক্স‌প্রেস ট্রেনের ব‌গি চার ঘণ্টা পর উদ্ধার, ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক ◈ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা ◈ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকার টু শব্দ করার সাহস পাচ্ছে না: বিএনপি ◈ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সোমালিয় পুলিশ ও বহুজাতিক নৌবাহিনী ◈ জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিবিতে অভিযোগ করলেন জবি ছাত্রী ◈ ঈদের পর কাওরান বাজার যাবে গাবতলীতে: মেয়র আতিক ◈ আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা কয়লায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই: এস আর শিপিং ◈ পাপেট সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত সব নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ বলবে যুক্তরাষ্ট্র: জয়  ◈ চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে তিন দিন লাগতে পারে: রেল সচিব ◈ তামিম ও রিশাদ ঝড়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০১৯, ০১:৩৪ রাত
আপডেট : ১১ অক্টোবর, ২০১৯, ০১:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্যাতনের কারণে ৫ বছরে বুয়েট ছেড়েছেন ৩০ ছাত্র

মাজহারুল ইসলাম : বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওইসব শিক্ষার্থীরা বুয়েট ত্যাগ করেন। এদের অধিকাংশকেই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নির্যাতন করা হয়। এর আগেও নির্যাতনের শিকার হয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বুয়েট ত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থীদের চালু করা ওয়েবপেজে গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬৬টি অভিযোগ পড়েছে। ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পেজটি খোলা হয়। পেজটি গতকাল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আমাদেরসময়

নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে বুয়েটের সোহরাওয়ার্দী হলে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদ রহমানকে ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন করা হয়। পরের বছর তিনি বুয়েট ছেড়ে একটি পাবলিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। একই বছরে আবদুর রহিম নামে আরও এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের কারণে বুয়েট ত্যাগ করে সিলেট এমজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগের আগে দুজনই কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি।

নির্যাতিত আবদুর রহিম বলেন, আমার স্বপ্নই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনো বুয়েটের দিনগুলো ভুলতে পারছি না। আবরারের ঘটনার পর তো মনে হচ্ছে, জীবন নিয়ে যে ফিরতে পেরেছি, সেটাই ভাগ্য। গত বছর বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাইফুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীকেও মারধর করা হয়। তিনিও বুয়েট ছেড়ে যান।

বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামী উস সানি বলেন, যারাই এমন র্যা গিং-এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। অপরাধীর পরিচয় অপরাধী, তার পরিচয় ছাত্রলীগ না। বুয়েটের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একেএম মাসুদ জানান, ক্ষমতাসীন ছাত্ররা প্রভাব বিস্তার করতে র্যা গের নামে নির্যাতন করছে। কিন্তু এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রশাসন বরাবরই নিশ্চুপ। আবরারের খুনের দায় প্রশাসন এড়িয়ে যেতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি হলেই নিয়মিত র্যা গিংয়ের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতি এবং শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় প্রতি সপ্তাহে বুধ এবং বৃহস্পতিবার গেস্টরুমে রাজনৈতিক হাজিরার দিন ধার্য থাকে। সেদিনই অনেকে র্যা গিংয়ের শিকার হন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বুয়েটের ৮ হলের প্রতিটিতে কমপক্ষে ৫টি রাজনৈতিক কক্ষে শিক্ষার্থীদের ডেকে মারধর ও বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়। হলের ছাদেও চলে এই ধরনের নির্যাতন। ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীরাই এ ধরনের নির্যাতন করে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সবাই জানলেও কেউ প্রতিবাদ করত না।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে শেরেবাংলা হলের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রুবেল নামে এক শিক্ষার্থীও র্নির্যাতনের শিকার হন। গত বছরের ৯ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী হলের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দাইয়্যান নাফিজকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামী-উস সানির নেতৃত্বে মারধর করা হয়। সে সময়ে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ওই শিক্ষার্থীকে ফেসবুক লাইভে এনে গুজব সৃষ্টি করেছেন এ মর্মে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেন। ২০১৫ সালে রাব্বানীর নেতৃত্বে বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী শাহাদাৎ হোসেইনকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়। চলতি বছরের ২৭ জুন আহসানউল্লাহ হলে ২০৫ নম্বর রুমে তিনজনকে মারধর করার প্রতিবাদ জানান অভিজিৎ কর নামে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী। এ কারণে তাকেও নির্যাতন করা হয়। আঘাত পাওয়ার কারণে তিনি একটি কানের শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন। ২০১৩ সালে এনামুল হক নামে এক শিক্ষার্থীকে মেকানিক্যাল কুইজ পরীক্ষার দেওয়ার সময় হল থেকে তুলে এনে আহসানউল্লাহ হলের টর্চার সেলের ৩১৯ নম্বর রুমে মারধর করা হয়।
অভিযোগ দেয়ার ওয়েবপেজ ঘেঁটে ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। ড. এমএ রশিদ হলে এক ছাত্রকে কান দিয়ে গরম পানি ঢেলে দেয়া হয়। ২০১৫ সালে বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি শুভ্র জ্যোতি টিকাদার এক ছাত্রকে মারধর করে। তার মুখে লাথি মেরে রক্তাক্ত করার পর আরেক ছাত্রলীগ নেতা ক্ষত স্থানে লবণ ছিটিয়ে দেয়। র্যা গিং-এর নামে এক শিক্ষার্থীকে পেটানোর কারণে তার কান ফেটে যায়। এ অভিযোগের সত্যতা মেলায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে হল থেকে বহিষ্কার হন আহসানউল্লাহ হলের ছাত্রলীগ নেতা সৌমিত্র লাহিড়ী। কিন্তু দলীয় প্রভাবে তিনি হলেই থাকতেন।
এমআই/এসবি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়