ডেস্ক রিপোর্ট : ক্যাসিনোর টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়া রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু, তার ভাই একই কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া এবং তাদের দুই সহযোগী এখনও অধরা।যুগান্তর
ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ২৪ সেপ্টেম্বর এনু-রুপন ও তাদের দুই সহযোগীর বাসা থেকে ৫ কোটির বেশি টাকা, ৮ কেজি স্বর্ণ ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানায় ৭টি মামলা হলেও এখনও এনু-রুপন এবং তাদের দুই সহযোগী হারুন অর রশিদ ও আবুল কালাম অধরাই রয়ে গেছেন। মামলাগুলোর মধ্যে মানি লন্ডারিং আইনের ৪টি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
এছাড়া সিআইডির তদন্তাধীন আছে গ্রেফতার যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম ও সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় হওয়া তিনটি মানি লন্ডারিং আইনের মামলাও।
জানা গেছে, অভিযানের কয়েকদিন আগেই থাইল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন এনামুল হক এনু। আর তার ভাই রুপন ভূঁইয়াসহ অন্য সহযোগীরা দেশেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তাদের গ্রেফতার করতে না পারাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গেণ্ডারিয়া ও সূত্রাপুর এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, এনু না হয় দেশের বাইরে, পুলিশ চাইলে রুপন ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করতে পারে।
এনু-রুপনের ভাই রশিদুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে জুয়ার ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো অ্যাকশনে যাচ্ছে না কেউ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, আমরা মানি লন্ডারিং আইনে করা সাতটি মামলার তদন্ত করছি। এজাহারে যাদের নাম আছে শুধু তারাই নন, এর সঙ্গে অন্য কারও নাম পাওয়া গেলে তাদেরও আসামি করা হবে।
তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং আইনটির মধ্যে অনেক বিষয় রয়েছে। প্রথমত, আমরা তদন্ত করে দেখছি, যে টাকাগুলো উদ্ধার হয়েছে সেগুলো বৈধ নাকি অবৈধ। যদি টাকার উৎস দেখাতে না পারে, সেক্ষেত্রে এই টাকা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। তখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার কাছে তথ্য চেয়েছি। তথ্যগুলো পেলে তা গ্রেফতার আসামিদের রিমান্ডে দেয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ক্যাসিনো-কাণ্ডে এনু-রুপন ও তাদের দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে করা সাত মামলার মধ্যে অস্ত্র মামলার তদন্ত করছে ওয়ারী থানা পুলিশ। আর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার তদন্ত করছে সূত্রাপুর থানা পুলিশ।
ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান ও সূত্রাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স্নেহাশীষ রায় বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। একসময় পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও মেলায় তারা হাউজি-জুয়া চালালেও কয়েক বছর ধরে মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় এর বিস্তৃতি ঘটায়। তিন বছরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫টি বাড়ি তৈরি করে ওই দুই ভাই। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।
দামি গাড়িতে চলার পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে তাদের পরিবারের ৯ জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নানা পদ বাগিয়ে নেয়। আর এসবের সত্যতাও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব এনু ও রুপনের মুরগীটোলার বাড়ি ও অপর দুটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে যে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে, এর একটি ছিল অবৈধ। র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ও আরামবাগ ক্লাব তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ক্লাবগুলোয় র্যাবের অভিযানের মুখে তারা লোহার সিন্দুক কিনে ক্যাসিনো থেকে পাওয়া টাকা নিজেদের ফ্ল্যাট এবং দুই সহযোগী কালাম ও হারুনের বাসায় রেখেছিল।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, পুরান ঢাকায় এনু-রুপনদের আরও এক সহযোগীর মুরগীটোলার বাসায় টাকার সিন্দুক লুকিয়ে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে র্যাব অনুসন্ধান শুরু করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :