নোমান মোহাম্মদ : আবরারের জন্য আজ অনেকেই কাঁদছেন। আসলে কেউ কাঁদছেন না। সবাই দায় সারছেন। আমি যে বেঁচে আছি, আমার সন্তান বেঁচে আছে, বন্ধু-স্বজনরা বেঁচে আছে সে ভেবে গোপনে তৃপ্তির ঢেঁকুড় পর্যন্ত তুলছেন কেউ কেউ। জান্তব জনপদে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায় শ্বাপদরা। ওদের ভয়ে আমরা সবাই কুঁকড়ে। শোক প্রকাশেও তাই আমাদের পরিমিতি। একটু হা-হুতাশ, একটু হাহাকার। ব্যস! এর বেশি যেন কিছুতেই না হয়। তাহলে যে আমি ও আমরা টার্গেট হয়ে যেতে পারি! আর এই হত্যাকে জায়েজ করতে চায় কিছু বরাহ শাবক। বরাহ শাবক বুঝলেন না, শুয়োরের বাচ্চা। ওরা ইনিয়ে-বিনিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলতে চায়, ভিন্নমতের হলেই হত্যার অনুমোদন দেয়া যায়। পিশাচের নগ্ন উৎসবে নীরব দর্শক হওয়া যায়।
প্রকাশ্যে হাততালি দিতে পারছে না বলেই বরং তাদের মনোযাতনা। প্রকৃত খুনিদের চেয়ে এই জারজরা কম নৃশংস নয়। কিছুদিন আগে এক ‘ট্রেন্ড’ শুরু হয়েছিলো। প্রকাশ্য দিবালোকে গণপিটুনিতে হত্যা। সেখানে হাজার হাজার মানুষ; আসলে হাজার হাজার পশু। তবু আমি এ ভেবে কিছুটা স্বান্তনা পেতে চেয়েছি, সেই পশুপালে কিছু কিছু মানুষ নিশ্চয়ই ছিলো। হাজার পশুর সঙ্গে তিনি বা তারা পেরে ওঠেননি। কিন্তু আবরারের এই হত্যাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করি? দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের প্রতিষ্ঠান এই বুয়েট। সেখানে একটি রুমে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো ছেলেটিকে। সেখানে কতোজন ছিল? ১০-১৫-২০। সেখানে কারো একটু মায়া হয়নি। কারও একটিবার মনে হয়নি, আবরারকে ছেড়ে দিই।
কারো মনে হয়নি, একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের শাস্তি মৃত্যুদ- হতে পারে না। দেশের ‘সবচেয়ে মেধাবী’ ২০ জনের যখন তা মনে হয়নি, দেশের বাকি ২০ কোটি মানুষের তা মনে হবে কেন? কিছুদিন আগে এক মাকে গণপিটুনিতে হত্যার পর নিজেদের ওপর যে অভিশম্পাত করেছিলাম, সেটি আমি করছি আবার। আবরারের মা-বাবার অভিশাপে এই অভিশপ্ত জনপদ ধ্বংস হয়ে যাক। নদীগুলো হয়ে যাক অগ্নুৎপাতের লাভাস্রোত। বৃক্ষ থেকে বৃক্ষে ছড়িয়ে পড়ুক বেপরোয়া বজ্রস্ফুলিঙ্গ। আগুন-বৃষ্টিতে ছাই হয়ে যাক ৫৬ হাজার বর্গমাইল। পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য প্রকৃতির কাছে এটাই এখন আমার প্রার্থনা। আমরা মানুষ নই, আমরা পিশাচ/আমরা মানুষ নই, আমরা জানোয়ার/আমরা মানুষ নই, আমরা দানব/আমরা মানুষ নই, আমরা বর্বর/আমরা মানুষ নই, আমরা জল্লাদ/আমরা মানুষ নই, আমরা জম্বি/আমরা পচে গেছি,আমরা গলে গেছি/আমাদের একটা অতীত হয়তো ছিল,আমাদের কোনো বর্তমান নেই, আমাদের কোনো ভবিষ্যত নেই।আমাদের ক্ষমা নেই। আমাদের ক্ষমা নেই। আমাদের ক্ষমা নেই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :