শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০২:৪৩ রাত
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০২:৪৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাতালে ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’

সুজিৎ নন্দী: সবই আলোকচিত্র। ভিন্ন কিছু নেই। মেঝেতে কাঁচের বড় বড় ফলকের সঙ্গে বেশ সুদৃশ্যভাবেই আলোকচিত্রগুলো প্রদর্শন করা হয়েছে। সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও রয়েছে। প্রতিটি ফ্রেমে ক্রমিক নম্বর দেয়া। সেই ক্রম অনুসরণ করে দেখতে থাকলে দর্শকেরা একেবারে দেশের প্রাচীনকালের ভূ-নৃতাত্ত্বিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর্ব পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি একঝলকে দেখা যায়। ২৫মার্চের কালোরাতের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে একটি অংশ তৈরি কালো মার্বেল পাথর দিয়ে। এটি ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষে গত তিন বছরেরও বেশি আগে চালু হয়েছে ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’। তাতে তুলে ধরা হয়েছে দেশ-জাতির গৌরবময় ইতিহাস ও সংগ্রামের ছবি। তবে নিদর্শনের স্বল্পতা কিছুটা আছে, পর্যাপ্ত আলো, চারপাশের পরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে দর্শকেরা পুরোটাই তৃপ্ত। পুরো প্রকল্পটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় । পরিচ্ছন্নতাসহ পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করেছেন গণপূর্ত বিভাগ।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ চত্বরের ভূগর্ভে তৈরি করা হয়েছে এই ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’। ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প’ নামে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ২৯ জুন। মোট ২৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের ৩০ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিশেষ সেল। এর ১৫০ ফুট উচ্চতা ও ১৬ বাই ১৬ বর্গফুট আয়তনের কাচের স্তম্ভটির নকশা করেন মেসার্স আরবানা নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী ও মেরিনা তাবাসসুম।

উদ্যানের উত্তরে স্বাধীনতা স্তম্ভের মূল স্থাপনা। এর নিচেই স্বাধীনতা জাদুঘর। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এটি পরিচালনা করছে। নিদর্শন সংগ্রহ, প্রদর্শনসহ সামগ্রিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় জাদুঘরকে। ২০১৬ সালের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতা জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকে। এ ছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা এবং শুক্রবার বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত খোলা। টিকিট ২০ টাকা। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা সাড়ে ৩টায় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।

জাদুঘরে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, আর উদ্যানে বেড়াতে আসা তরুণ-তরুণীরাই এর প্রধান দর্শক। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ভূগর্ভস্থ কক্ষে নিদর্শনগুলো সাজানো।

প্রথমেই রয়েছে দেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। বাংলা ভাষার বিবর্তন। প্রাচীন মহাস্থান, উয়ারী-বটেশ্বর ইত্যাদি। এরপরে ব্রিটিশ আমল, নীল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহ, বঙ্গভঙ্গ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভারতের স্বাধীনতা লাভ। পাকিস্তান পর্বে আছে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) সেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষণ ‘উর্দূ এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমানকে এই ময়দানেই বিশাল জনসভায় দেয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। এসব ছবির সঙ্গে আছে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দৃশ্য। পশ্চিম দিকের দেয়ালের অনেকটা অংশজুড়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের সেই বিশালাকার আলোকচিত্র। তর্জনী উঁচিয়ে জনসমুদ্রে ভাষণ দিচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মোগল আমল থেকে রেসকোর্স ও পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক ময়দানের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর বেশ কিছু দুর্লভ ছবি রয়েছে।

একটি কক্ষ খানিকটা সংকুচিত, প্যাসেজের মতো। এই অংশটুকুর দুই পাশের দেয়াল ও মেঝে কালো রঙের গ্রানাইট পাথরের টালি দিয়ে ঢাকা। দেয়ালে কালো ফ্রেমে বাঁধাই করা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার দৃশ্য। মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যমালা শেষ হয়েছে আলোকিত বিজয়ের মধ্য দিয়ে। সামনেই সেই ঐতিহাসিক টেবিল, যার ওপরে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন হানাদারপ্রধান জেনারেল নিয়াজি। দেয়ালে সেই ছবিটিও বড় করে টাঙানো আছে। এরপরে স্বাধীন বাংলাদেশে পর্ব।

সম্পাদনা: অশোকেশ রায়

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়