আবদুল কাইয়ুম : কয়দিন আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের পর কোনো বাংলাদেশি ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যায়নি। বিএনপির সুরও একই রকম। বিএনপির মহাসচিবও একই কথা বলে আওয়ামী লীগকে পরোক্ষভাবে ক্রেডিটও দিলেন। তিনি বললেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারতের চেয়ে ভালো।
‘স্বাধীনতার পর আর কেউ স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে অর্থনীতির সাবেক এই অধ্যাপক বলেছেন, কেন যাবে? আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে ওদের চেয়ে অনেক ভালো আছি। আমাদের লোক ভারতে যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।’
একটা বিষয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতৈক্য আছে যে ভারত থেকে ১৪-১৫ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলেই তা মেনে নেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে এই ঠেলাটা সামলাতে হবে আওয়ামী লীগকেই। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইতোমধ্যে ফাঁপড়ে আছে আওয়ামী লীগ। আর এখানেই মজা লুটতে চায় বিএনপি। দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করে সরকারকে টলাতে না পেরে মনে মনে এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু পরিপক্ব হওয়ার অপেক্ষায় আছে বিএনপি। আমারও মনে হয়, বিএনপির ঘরে ফসল উঠলে, রোহিঙ্গা এবং ভারতের এনআরসি ইস্যুর ধারাবাহিকতায় সেই ফসল উঠতে পারে। এজন্য বিএনপি এই দুটি গাছে পানিও দিতে শুরু করেছে। তবে টানা একদশক ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আওয়ামী লীগও নানা দিকে দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক দক্ষতাও বাড়িয়েছে। এনআরসি নিয়ে ভারতের ভেতরেও অনেক বিতর্ক আছে। ফলে এই ইস্যুটিকে অনেকদিন ঝুলিয়ে রাখা এবং এটি নিয়ে সময়ক্ষেপণের সুযোগ আছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পদক্ষেপ কম নেয়া হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন বাংলাদেশের পক্ষে। ফলে বিএনপি যতোটা ফসল তোলার আশা করছে, ততোটা হয়তো পারবে না। পারতো যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশ একটা অর্থনৈতিক হাব হতো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি দ্রুত হলেও এখনো ভর কেন্দ্র বিবেচনা করা হয় ভারতকে। বিষয়টা নানাভাবে উপলব্ধি করা যায়। আর একজন সাংবাদিক যদি খালি চোখে দেখেন তিনি দেখতে পাবেন, ব্রিটিশ হাই কমিশনের দক্ষিণ এশিয়ার হাব করা হয়েছে ভারতে। বিবিসিসহ বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যমের সাংবাদিক বাংলাদেশে থাকলেও ভারতে তারা যতোটা দক্ষ ও উচ্চ বেতনের সাংবাদিক নিয়োগ করে, বাংলাদেশে তেমনটা করে না।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হাব যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর পশ্চিমা শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা আরও পরিষ্কার বোঝা যায় বিবিসি, স্কাই নিউজসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রচারিত হংকংয়ের সাম্প্রতিক সংবাদ পরিবেশন দেখলে। একটা লোকও মরেনি, কিন্তু টানা তিন মাস ধরে চলমান এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের খবর নিয়মিতভাবে লাইভ প্রচার করে আসছে এসব গণমাধ্যম। হংকংও ব্রিটিশের রেখে আসা কলোনি, বাংলাদেশও। বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে কিন্তু বিবিসি, সিএনএনের এতো মাথা ব্যথা নেই (বিবিসিসহ অন্যান্য বাংলা সার্ভিস এখানে বিবেচ্য নয়)। বাংলাদেশে খালি অগ্নিকা-, প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর ভবন ধসের মতো ঘটনাগুলো পশ্চিমা গণমাধ্যমে কিছুটা গুরুত্ব পায়। অথচ বাংলাদেশের মানুষের সময়ই কাটে টেলিভিশনে রাজনৈতিক খবর আর টকশো দেখে। বাংলাদেশের রাজনীতির গুরুত্ব পশ্চিমা গণমাধ্যমে নেই, কারণ তারা ভারতের রাজনীতিকে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ, উৎপাদন আর বিশ্ববাজারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হতে পারলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই, সেটি নিয়ে মাথা ব্যথা দেখাবে ধনী দেশ এবং তাদের গণমাধ্যমগুলো। আর এই মুহূর্তে ধনী ও শক্তিশালী দেশগুলোর কাছে যেকোনো বিচার, অভিযোগ কিংবা সাহায্য চাইতে গেলে পিঠে হাত বুলিয়ে মিষ্টি কথা বলে বিদায় করে দেবে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :