শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৫:৩৯ সকাল
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৫:৩৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোটি কোটি টাকা অর্জনের এক রকম মেশিন ছিলেন জিকে শামীম !

নিউজ ডেস্ক : ঠিকাদারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অবৈধ কর্মকা- করে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া (জিকে) শামীম এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি ছিলেন ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদক। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ ক্যাডার। সূত্র : আমাদের সময়

পরবর্তীকালে টাকার জোরে জিকে শামীম যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পদ বাগিয়ে নেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও হন। গণপূর্ত অধিদপ্তর, রাজউক, শিক্ষা ভবনে অবস্থিত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারদের কাছে আতঙ্কের নাম ছিল জিকে শামীম। তাকে বাদ দিয়ে কোনো কাজের টেন্ডার অন্য ঠিকাদার নিতে পারতেন না। চলতেন সব সময় অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে। জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ায় সরকারি ওইসব দপ্তরের ঠিকাদারদের মধ্যে এখন আনন্দের বন্যা বইছে।

এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের পক্ষে জিকে শামীম টেন্ডারবাজি করতেন। দুই থেকে আড়াই বছর আগে জিকে শামীমকে কব্জা করেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কয়েক প্রভাবশালী নেতা। এর পর থেকে জিকে শামীম দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ জিসানকে বাদ দিয়ে তাদের পক্ষে ঠিকাদারি-টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি করতে থাকেন। এ নিয়ে জিসানের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার। এর জের ধরে জিসানের বিরুদ্ধে মতিঝিল, পল্টন ও রমনা থানা এলাকায় দুই বছর আগে পোস্টারিং হয়। এ দায়িত্ব পালন করেন জিকে শামীম। তার নিয়ন্ত্রণে আছে বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার। যেসব অস্ত্র মাঝেমধ্যেই টেন্ডারবাজিতে ব্যবহার হতো বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কয়েক প্রভাবশালী নেতা চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির জন্য বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন কয়েক বছর আগে। অবৈধ উপায়ে এ গ্রুপের কোটি কোটি টাকা অর্জনের এক রকম মেশিন ছিলেন জিকে শামীম। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কেনাকাটা, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা প্রকল্পের শত শত কোটি টাকার কাজ কব্জা করতে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জিকে শামীম শুধু অস্ত্রধারী ক্যাডারই পালতেন না, সরকারি ওই সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করতেন। বিনিময়ে তারাও পেতেন কমিশন। গণপূর্ত অধিদপ্তর (পিডব্লিউডি), আবদুল গণি রোডের খাদ্য ভবন, বিদ্যুৎ ভবন, শিক্ষা ভবন, রেল ভবন, মতিঝিল বিআইডব্লিউটিসি ভবন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ক্রীড়া পরিষদ ভবনসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বড় বড় প্রকল্পের কাজ খালেদ-জিকে শামীম সিন্ডিকেট পেত। এ ছাড়া ওই সব দপ্তরের কোটি কোটি টাকার কেনাকাটার কাজও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সরকারি ওইসব দপ্তরের আন্তর্জাতিক দরপত্রের কাজ যেসব প্রতিষ্ঠান পেত, তাদের কাছ থেকেও জিকে শামীম-খালেদ সিন্ডিকেট ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমিশন আদায় করত। তাদের কমিশন না দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ পাওয়া ছিল দুরূহ ব্যাপার। এ সিন্ডিকেটে মাঝেমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক প্রভাবশালী নেতাও যুক্ত হতেন। জিকে শামীমের অস্ত্রধারী গ্রুপে অন্তত ৬০ জনের মতো ক্যাডার রয়েছে। যাদের প্রত্যেকের হাতেই অবৈধ অস্ত্র। এ ক্যাডাররা জিকে শামীমকে এসকর্ট দিয়ে যে কোনো গন্তব্যে নিয়ে যেত।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার বাসিন্দা জিকে শামীমের বাবা আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন স্থানীয় হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার তিন ছেলের মধ্যে জিকে শামীম মেজো। হাইস্কুল পার হওয়ার পরই জিকে শামীম ঢাকার বাসাবো-সবুজবাগ এলাকায় চলে আসেন। মতিঝিল এজিবি কলোনিতেও ছিলেন অনেক দিন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার ’৯১ সালে ক্ষমতাসীন হয়। বিএনপির ক্ষমতার শেষদিকে জিকে শামীম একজন ক্ষুদ্র ঠিকাদার হিসেবে যাত্রা করেন। তখন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি ঠিকাদারি ব্যবসা করতে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত হন। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর যুবদলের রাজনীতি শুরু করেন। পরে ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। এ সময় মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা কালু ও মির্জা খোকনের সঙ্গে জিকে শামীমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর থেকেই গণপূর্ত ভবনের ঠিকাদারি ব্যবসা চাঙ্গা করে তোলেন। টাকার জোরে ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারি কাজের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জিকে শামীম ভোল পাল্টানো শুরু করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জিকে শামীম আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। তখন এই যুবলীগ নেতা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে যৌথভাবে গণপূর্তসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঠিকাদারি-টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণে নেন। পরবর্তীকালে জিসানকে ছেড়ে যোগ দেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া সিন্ডিকেটে। বর্তমানে রাজধানীতে জিকে শামীমের ৫০০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদারি-টেন্ডারবাজি করে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার রয়েছে আলিশান বাড়ি-একাধিক ফ্ল্যাট। এ ছাড়া ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকশ বিঘা জমির মালিক জিকে শামীম।

যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু গতকাল শুক্রবার বলেন, এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমের যুবলীগে কোনো পদ নেই। তিনি নিজেই নিজেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন। যুবদলের সাবেক সহসম্পাদক জিকে শামীম বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়