ইমরান হোসাইন : ইলিশ শূন্যতায় হাহাকার চলছে বরগুনার পাথরঘাটার জেলে পল্লি গুলোতে। বঙ্গোপসাগর ও বিষখালী নদীর ইলিশকে ঘিরেই এখানকার জেলেদের জীবন ও জীবিকার চাকা ঘুরছে। শ্রাবন পেরিয়ে এখন ভাদ্র শেষ নদী ও সাগরে বেড়েছে পানি, থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি তবুও দেখা নেই রুপালি ইলিশের।
সাগর ও নদীতে মাছ না পাওয়ায় উপকূলের জেলে পরিবার অভাব অনটন আর চরম হতাশার মধ্যে দিন পার করছে। সাগর কিংবা নদীতে জাল ফেলে দু-একটা ইলিশের দেখা পেলেও তা হয়তো পরিবারের আহারেই চলে যায়। আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে ঋণ করে চলছে জেলেদের সংসার। এনজিওর লোন আর মহাজনের দাদনের ভাবনাই যেন জেলেদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
অন্যদিকে জেলেদের লোন ও দাদন দিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এনজিও এবং ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। জেলেরা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার, নৌকা ও জাল কিনে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। হতাশায় এখন অনেক জেলেই নদীতে যাচ্ছেন না। নদীর তীরেও অনেকে নৌকায় বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন জেলেরা। বর্তমানে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস অবতরন কেন্দ্র (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, ঘাটে নোঙর করে আছে জেলেদের শতাধিক ট্রলার। আড়তে অলস সময় পার করছেন আড়ৎদাররা। দু-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। কারণ এ সময়ে যে পরিমাণ মাছ অবতরন কেন্দ্রে আসার কথা তার তিন ভাগের এক ভাগও ইলিশ কেনা-বেচা নেই।
মৎস অবতরন কেন্দ্র ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদী ও সমুদ্রে ইলিশ ধরা না পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। দিন-রাত জাল ফেলে যে কয়টি মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচও হয়না। জেলেরা আরও জানান, অনেকে এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু ইলিশ ধরা না পড়ায় দেনাও শোধ করতে পারছেন না তারা। নদীতে জাল ফেলে ফিরছে খালি হাতে। চড়া সুদে আনা ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। ট্রলার মাঝিদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, প্রতি বছর বৈশাখ থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও এবছর ভরা মৌসুমে দুমাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে কয়েক দিন ইলিশ ধরা পড়লেও এখন ভাদ্র মাস শেষ হতে চললেও ইলিশের দেখা মিলছে না।
ইলিশের আড়ৎদার হাফিজুর রহমান বলেন, ভাদ্র মাসে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়বে সেই আশায় ছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না। বাকী সময়ে ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহ্ফুজুল হাসনাইন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারনে জেলেরা গভীর সমুদ্রে যেতে পারছে না। তাছারা এ বছর জলবায়ুর কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। যে কারনে মনে হয় তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। আমরা আশা করি খুব অচিরেই রুপালি ইলিশ ধরা পড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :