স্বপ্না চক্রবর্তী : বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র ট্রাকে রাজধানীতে দ্বিতীয় দিনের মত ট্রাকে করে ন্যায্যমূল্যে ৪৫ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও খুচড়া পর্যায়ে এখনো অসহনীয় রয়েছে দাম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মুদির দোকানগুলোতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আদায় করছেন ব্যবসায়ীরা। মাত্র ৫ টি স্পটে টিসিবি’র ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় তা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না সবার পক্ষে। তাই বাধ্য হয়ে দোকানগুলো থেকেই কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এই অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির।
রাজধানীর মগবাজার এলাকার আফরিন জেনারেল স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী সোহানুর রহমান জানান, সকাল থেকে ৮০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করলেও বিকালের দিকে ৭০ টাকায় দাম নেমে এসেছে। কেউ কেউ এখনো ৮০ টাকাই আদায় করছেন। ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ একেবারেই নাই বলেও জানান তিনি।
এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টিসিবি’র ট্রাকের সামনে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ কেনার জন্য ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন। পেঁয়াজ কিনতে আসা বেসরকারি কোম্পানীতে কর্মরত শহীদুল ইসলাম বলেন, মাসের মাঝখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন একটি পণ্যের এমন অপ্রত্যাশিত দাম বৃদ্ধিতে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। আগে জানলে তো একসাথে বেশি পরিমাণে কিনে রাখতাম। কিন্তু এখন তো নাভিশ্বাস বের হয়ে যাচ্ছে। আরেক ক্রেতা রফিক মিয়া বলেন, প্রত্যেক ক্রেতা মাত্র দুই কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছে এখান থেকে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই সামান্য। তাই এই পরিমাণ আরও বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।
প্রেসক্লাব ছাড়াও নতুন চারটি স্থানে দ্বিতীয় দিনের মতো ৪৫ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান টিসিবি’র মুখপাত্র হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, দ্বিতীয় দিনও রাজধানীর পাঁচটি স্থানে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। প্রেসক্লাব ছাড়া নতুন স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে মিরপুর স্টেডিয়ামের চার নম্বর গেটের সামনে, মধ্য বাড্ডা, আব্দুল্লাহপুর মোড় ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে। দাম না কমা পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে।
দুই একদিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়লে ট্রাকের সংখ্যা আরও বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিটি ডিলারকে ১ হাজার কেজি করে পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছে। আমাদের সোর্সিং চলছে। দু’একদিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরও ট্রাক সেল বাড়ানো হবে। তিনি জানান, বন্দরে গত শনিবার থেকে এলসি ভ্যালু বেড়ে ৮৫২ ডলার নির্ধারিত হওয়ায় পেঁয়াজের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে বন্দরে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৭৩ টাকা করে। এলসি ভ্যালুর প্রভাবে গত শনিবার ১৫টি, রোববার ৩৪টি পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে। এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৩৬-৪০ টাকা থেকে ৫৫-৬০ টাকা উঠে যায়। তবে রোববার ভারত থেকে ৮৬টি পেঁয়াজের ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করায় সোমবার পেয়াঁজের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা কমেছে।
এর আগে গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি রোধে খোলাবাজারে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শুধু তাই নয় পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন ও সুদের হার কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠিও পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া বন্দরে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত খালাস করা ও নির্বিঘ্ন পরিবহন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
নিজেদের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ভারত সরকার গত শুক্রবার পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য তিনগুণ করে এরই সুযোগ নিচ্ছে একদল দেশীয় ব্যবসায়ী বলে মন্তব্যও করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তবে এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :