শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৭:১৩ সকাল
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০৭:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান, পোস্টার সন্ত্রাস ও রাজনীতি

দীপক চৌধুরী : ছাত্রলীগের বিষয়টা একটি নজিরবিহীন ঘটনা, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা ঘটেনি। ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদচ্যুত করাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা দেখছেন ‘কড়া বার্তা’ হিসেবে। বিএনপি অপরাধীদের আশ্রয় দেয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ দেয় না। এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য। সুতরাং রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান অনতিবিলম্বে চালু করা উচিত বলে গ্রামগঞ্জেও কথা উঠেছে।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী। অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যদি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশে জবাবদিহি বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে। এতোদিন কোনো অনিয়ম হলেই বলা হতো, ‘সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ মানুষ মনে করে, এটা অনেকটাই কথার কথা। তবে এটাও সত্যি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দলের এমপি-মন্ত্রীকে জেলে যেতে হয়েছে। একজন ক্ষমতাধর এমপি তো দীর্ঘ দিন ধরেই জেলে। প্রভাবশালী ব্যক্তি, এমপি, সাবেক মন্ত্রী, বিশিষ্ট ব্যাংকার দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজিরা দিতে বাধ্য হয়েছেন, অর্থের উৎস জানাতে না পারলে জেলেও গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু বাজারে প্রচলিত আছে, ‘কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না এ কথায় মানুষের ভরসা কম। একথাটি বহুবার শুনেছে মানুষ।’ মানুষ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মতো ‘এ্যাকশন’ দেখতে চায়। আমরা জানি, দলের কারও মাধ্যমে কোনো সেক্টরের দুর্নীতি, অপরাধ, অপকর্ম তথা অনিয়ম প্রধানমন্ত্রীকেই মোকাবিলা করতে হয়। আম-জনতা জানে, সবকিছুর জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং কঠিন না হলে সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।
আমরা আরো ভালো করেই জানি, দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিতর্কিত নেতা, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যাদেরও ‘আমলনামা’ শেখ হাসিনার টেবিলে রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলা হয়েছে রিপোর্ট নেওয়ার জন্য, আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে কোথাও কোনো অন্যায়-অপকর্ম, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা হলে যথাযথ তথ্য দিতে। ভবিষ্যতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। এটা নভেম্বরের ভেতরেই। আগামী কাউন্সিলের আগেই ‘পরিণতিটা’ অনেকে বুঝতে পারবেন।

শেখ হাসিনার ওপর মানুষের আস্থার শত-সহ¯্র কারণ রয়েছে। তাঁকে ও তাঁর দলকে মানুষ বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে ভালবেসেই। বিশ্বপরিম-লে তিনি একজন আলোচিত নেতা। বিশ্বের তিনজন রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে শেখ হাসিনা একজন। এদেশের গণমানুষের স্বার্থে কাজের স্বীকৃতি আজ বিশ্বও দিচ্ছে। অসংখ্য পদকপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে তিনি নিজস্ব ইমেজ গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ‘এপিজে ড. আব্দুল কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক পেয়েছেন। এর আগেও বা এ যাবৎ তিনি ৩৭টি আন্তর্জাতিক পদক লাভ করেছেন।

জনগণ মনে করে বালিশ, পর্দা, বই, টিন, সাইনবোর্ড এসব নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ দরকার। আফজাল দম্পতি কীভাবে এতো লুটপাট করে ধরা পরেও দেশের বাইরে পাড়ি জমালো? এ প্রশ্নও উঠেছে। রাজধানীর নান্দনিক ও পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্যও অপঁচনশীল ব্যানার অন্যতম দায়ী। অথচ এ ধরনের পোস্টার ব্যানারে নগর ছেয়ে গেছে। কোথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোস্টার দেখি না অথচ তিনিই দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীও। নগরের এমন কোনো দেয়াল, ফ্লাইওভারের পিলার বা কোনো জায়গা নেই যেখানে আওয়ামী লীগের স্বার্থপর ছোট-ছোট নেতা, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ নামধারিদের চেহারা দেখানোর ব্যানার, পোস্টার নেই। যেখানে পোস্টার লাগানোর কিছু নেই সেখানেও খুঁটি গেড়ে ‘পোস্টার সন্ত্রাস’ চলছে।
ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট হিসেবে বুঝতে পারি, দেশের মানুষ ভীষণ আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ শেখ হাসিনার হাত দিয়েই আসবে। যতটা ধীর ও ক্যালকুলেটেড পথে তিনি এগুচ্ছেন তাতে সফলতা আসবেই। বঙ্গবন্ধুকন্যার কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানাচ্ছে মানুষ। তাঁর এ অবস্থান আওয়ামী লীগকে আরও জনপ্রিয় করবে।

সম্মেলন নিয়ে দুটি কথা বলতে চাই। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ, অর্থাৎ ২০তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। পরবর্তী সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করেছে দলটি। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের মোট সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৭৮। এর মধ্যে কেবল মৌলভীবাজার জেলার সম্মেলন ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউন্সিল না হওয়ায় বাকি ৭৭টি জেলা কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব জেলা কমিটির বেশির ভাগের সর্বশেষ কাউন্সিল ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পূর্ণাঙ্গকমিটি নেই এমন বহু জেলা রয়েছে। প্রায় ত্রিশটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে যেখানে জেলা সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের বাইরে কারা কমিটিতে আছেন তা স্থানীয়দের অজানা। ২০০৬ সালের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সম্মেলন হয়। তবে কমিটি হয় ২০১৩ সালে। আর সিলেটে সম্মেলন হয় ২০১১ সালে। শুনেছি, এখন কাউন্সিলের নামে বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা/উপজেলায় ‘তথাকথিত কমিটি’ করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে সুবিধাবাদী একশ্রেণির নেতা রয়েছেন যারা অর্থনৈতিক ফায়দা লুটতে দিনকে রাত বানাবেন। সময়ের দোহাই দিয়ে তারা অনেকেই ‘পকেট কমিটি’ বানাতে চাইবেন। সুতরাং তৃণমূলের কমিটির বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কড়া নজর কামনা করে দলের ত্যাগী নেতাকর্মী। আগামী পহেলা ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও অন্যান্য ইউনিটের সম্মেলন প্রত্যাশা করে দলীয় মানুষ।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়