নিউজ ডেস্ক : দন্ত্য চিকিৎসক ফরিদ সরদারের ঘরের সুইচ বোর্ডে বেলা আড়াইটার দিকে আগুন লাগে। দ্রুত তা নিভিয়ে তারে স্কচটেপ পেঁচিয়ে চেম্বারে চলে যান ফরিদ। সন্ধ্যায় ওই তার থেকেই ফের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে সুইচ বোর্ডটি নিচে পড়ে আগুন ধরে যায়। পরে তা ছড়ায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া প্লাস্টিকের পাইপে। এতেই সব শেষ। দৈনিক আমাদের সময়
গত ১৬ আগস্ট এভাবেই চোখের সামনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায় রাজধানীর মিরপুর-৭ নম্বর সেকশনের চলন্তিকা মোড়ের ঝিলপাড় বস্তির হাজারো ঘর। বস্তিজুড়ে অবৈধভাবে টানা বিদ্যুৎ-গ্যাসের প্লাস্টিক লাইনের কারণে দ্রুত আগুন ছড়ায়। ওই ঘটনায় গঠিত ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার কথা হয় ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে। তারা বলছেন, সে দিনের অগ্নিকা-ে পোড়া ঘরের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। তবে তদন্তের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, অগ্নিকা-ে পুড়েছে দুই হাজার ২৪৮টি কাঁচাঘর এবং আসবাব ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী। এতে আনুমানিক দুই কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হলেও উদ্ধার করা গেছে ৫০ লাখ টাকার মালামাল। আগুনে আহত হয়েছেন বস্তির ৪ বাসিন্দা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাশকতা নয়, আগুনের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে।
বস্তিতে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে গত ১৭ আগস্ট। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের উপপরিচালক (অ্যাম্বুলেন্স) আবুল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেনÑ সহকারী পরিচালক (অপারেশনস) আবদুল হালিম ও সহকারী উপপরিচালক নিয়াজ আহমেদ। গত সপ্তাহে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিজির দপ্তরে প্রতিবেদন দেয় কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান আবুল হোসেন গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, তদন্তে জানা গেছে, আগুনের সূত্রপাত বস্তিবাসী দন্ত চিকিৎসকের ঘরের বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড থেকে। প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. রজ্জব হোসেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ও বস্তির বাসিন্দা, মসজিদের মোয়াজ্জিন, পান দোকানদারসহ ১৬ জনের জবানবন্দি নেয় তদন্ত কমিটি। কাউন্সিলর রজ্জব হোসেন কমিটিকে জানান, আগুনে বস্তির ২ হাজার ২০০ ঘর পুড়েছে। অপরিকল্পিত গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ও গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
দন্ত চিকিৎসক ফরিদ সরদার বলেন, ১৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে তিনি বস্তিতে বসবাস করেন। বস্তিতে তার ৭টি ঘর ছিল। এর মধ্যে ভাড়া দিয়েছেন ৩টি। তার ঘরে বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ডে শর্টসার্কিটের মাধ্যমে প্রথমে আগুন লাগে। বস্তিতে কোনো শত্রুতা ছিল না এবং উচ্ছেদের ব্যাপারে কখনো কোনো মিটিং-মিছিল হয়নি।
বস্তিবাসী শফিকুল ইসলাম কমিটিকে জানান, ঘটনার ৩ মাস আগেও এ বস্তিতে আগুন লেগেছিল। তখন বস্তিবাসীরাই আগুন নেভান। বস্তিতে অবৈধ গ্যাসের চুলা প্রতি এক হাজার টাকা করে জনৈক বিল্লাল প্রতিমাসে এসে নিয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :