মোহাম্মদ মাসুদ : বাংলাদেশে সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে একাধিক খুনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বেশ নড়েচড়ে বসেছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সন্দেহে সপ্তাহ দেড়েক আগে শুধু ঢাকা থেকেই একদিনে শতাধিক কিশোরকে আটকের পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও চালানো হচ্ছে অভিযান। বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশে বিশেষত শহরাঞ্চলগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের সংস্কৃতি খুব একটা নতুন না হলেও এসব গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অভিযান খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু শহরগুলোতে এসব কিশোর গ্যাং কিভাবে গড়ে উঠছে? আর এসব গ্রুপের কর্মকা-ই বা কী?
কিশোর গ্যাং লিডার তানিম আহমেদ (ছদ্মনাম)। নিজ এলাকায় বড় আকারে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছিলেন। শুরুতে উদ্দেশ্য ছিলো অন্যগ্রুপের আক্রমন থেকে নিজেদের রক্ষা করা। পরবর্তীতে একটা সময় দেখা গেলো গ্যাংয়ের সবাই গুন্ডামি করছে।
তানিম বলেন, গ্যাং তৈরি হওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সংঘাত শুরু হয়। সিনিয়র-জুনিয়র, মেয়েঘটিত সমস্যা এমন গন্ডগোল প্রতিদিনই থাকতো। আর ১/২টা অস্ত্র ভয় দেখানোর জন্য রাখা হতো।
বন্ধুদের আড্ডায় তৈরি হওয়া গ্যাংয়ে মাঝে একসময় অস্ত্র ও মাদক ঢুকে পরে। অনেকে আবার শুরু করে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। একসময় নিজেকে রক্ষায় তাগিদে বেরিয়ে আসেন নিজের তৈরি গ্রুপ থেকে, বলেন তানিম।
তিনি আরো বলেন, আমাদের একটা গ্রুপ মাদক আর অস্ত্রের কারণে দুই ভাগ হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে অনেকে এতটাই ডুবে গিয়েছিলো যে এর জন্য জেলেও যেতে হয়েছে এবং সংঘাতে ঙ্গ জন মারাও গেছে।
তানিম আহমেদ গ্যাং থেকে বেরিয়ে বেঁচে গেছে। কিš ‘নতুন গ্যাং তৈরি হওয়া বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে লক্ষ করলে দেখা যায়, স্প্রে দিয়ে লেখা বিভিন্ন গ্যাংয়ের নাম। স্কুল বা আড্ডায় মজার ছলে এসব গ্যাং তৈরি হলেও পরে একসময় মাদক, অস্ত্র এমনকি খুনের মত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে কিশেরা গ্যাংয়ের সদস্যরা।
বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, আমরা কিশোর গ্যাংগুলোকে শনাক্ত করে অভিযান চালাই। সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা প্রায়ই সম্ভব হয়ে ওঠে না। এছাড়া ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের ইউিনিটগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা যেনো সংশ্লিষ্ট এলাকার অভিবাবক, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে।
কিশোর গ্যাং বিরোধী এসব অভিযানে ঢালাওভাবে আটক করে থানা-হাজতে নেয়ার সমালোচনা করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের বিভাগের চেয়ারপারসন রাশেদা ইরশাদ নাসির বলেন, কোনো নিরাপরাধ কিশোর বা তার পরিবার যেনো ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিকভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই-বাছাই করে এগোতে হবে। কোনো নিরাপরাধ কিশোর এর শিকার হলে, সাইকোলোজিক্যালি তার ট্রমা হতে পারে। সারা জীবনে সে এই ট্রমা হতে বেরোতে পারবে কিনা সেটা চিন্তার বিষয়। সম্পাদনা : কায়কোবাদ মিলন
আপনার মতামত লিখুন :