সালেহ্ বিপ্লব ও স্বপ্না চক্রবর্তী : শনিবার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে পিঁয়াজের কেজি একলাফেই বেড়েছে ১৭ টাকা। ফলে খুচরা বাজারে রোববার সকাল থেকে পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত পিঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়ানোয় দেশীয় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। আবার তারাই বলছেন নতুন আমদানি করা পিঁয়াজ এখনো বাজারেই আসেনি। এ অবস্থায় পিঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে আজ থেকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাক-সেল শুরু হচ্ছে।
ভারত আচমকাই পিঁয়াজের রপ্তানিমূল্য প্রতিটন আড়াইশ’ ডলার থেকে বাড়িয়ে সাড়ে আটশ’ ডলার করেছে। নতুন দরে পিঁয়াজ কিনে দেশে আনার আগেই দুম করে চড়ে গেছে বাজার।
চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামে পিঁয়াজের কোনও আমদানিকারক নেই। ঢাকার শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন স্থানের আমদানিকারকদের বেঁধে দেয়া দামেই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পিঁয়াজ বিক্রি করা হয়। এখানকার ব্যবসায়ীদের কারসাজি করার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, হিলি ও ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানিকারকরা পিয়াজের দর নিয়ে লুকোচুরি খেলছেন। দাম বাড়ানোর কারণে পাইকারি বাজারে পিঁয়াজের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের কাছে মজুত থাকা পিঁয়াজই বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শনিবার থেকে নতুন দামে এলসি করার কথা থাকলেও আমদানিকারকরা আগে থেকেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আড়তে দেখা গেলো, ভারতীয় নাসিক জাতের পিঁয়াজ বৃহষ্পতিবার বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকায়।আর শনিবার বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দরে। শনিবার পাইকারি বাজার থেকে যারা পিঁয়াজ কিনেছেন তারা খুচরা বাজারে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, আগস্ট মাস থেকে পিয়াজের দাম বাড়তি ছিল। এর আগে পাইকারি বাজারে ৪৫ টাকা থেকে কমে ৩৩-৩৫ টাকায় নেমে এসেছিলো।
গত মাসে ভারতে বন্যার কারণে কৃষিপণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে পিঁয়াজ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতীয় পিঁয়াজের বাজার আবার অস্থির হয়ে ওঠে। ৩৫ টাকা থেকে দর বাড়তে বাড়তে ৪৩-৪৫ টাকায় পৌঁছে। পিঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠলে ব্যবসায়ীরা পিয়াজ আমদানির নতুন বাজার খুঁজতে থাকে। মিয়ানমার থেকে সামান্য পরিমাণ পিঁয়াজ আমদানিও করা হয়। এরপর পাইকারি বাজারে ৪৫ টাকা থেকে কমে ৪০-৪২ টাকায় নেমে আসে।
চাক্তাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ বলেন, মিয়ানমার থেকে ৫ হাজার বস্তায় দুই লাখ টন পিয়াজ আমদানি করা হয়েছিলো।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালেও ভারত সরকার নিজেদের বাজার স্থিতিশীল রাখতে পিয়াজের রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন দেশীয় বাজারে পিঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ভারত থেকে ৭ থেকে ১১ লাখ টন পিঁয়াজ আমদানি করা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে ট্রাকে করে ন্যায্যদামে পিঁয়াজ বিক্রি করবে সরকার রোববার সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত এক জরুরি বৈঠকে শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আরও জানান, পিঁয়াজ আমাদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রাসের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও বন্দরে আমদানিকৃত পিঁয়াজের খালাস প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা এবং নির্বিঘ্ন পরিবহন নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
সম্পাদনায়, ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
আপনার মতামত লিখুন :