রেন্টিনা চাকমা : শুভ্রতার রঙে অনন্য স্নিগ্ধতায় ভরা অনন্য ঋতু শরৎ। গাঁয়ের মেঠোপথে সময়ের পরিক্রমায় শরৎ আসে সৌন্দর্য্যরে ঢালি নিয়ে। তবে ইটকাঠের এই যান্ত্রিক শহরে ষড়ঋতুর শরৎ এর রূপ সুষমা যেন কল্পনার রাজ্যের রূপকথা। রাজধানীর বাসিন্দাদের মাঝে বৈচিত্র্যপূর্ণ শরৎ এর সৌন্দর্য্য সুধার চিত্র তুলে ধরতেই বরাবরের মতো শরৎ উৎসবের আয়োজন করেছে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী।
ভাদ্রের পড়ন্ত সময়ে শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় আয়োজিত হয় এই উৎসব।সকাল-বিকাল দুই পর্বে বিভক্ত এ আয়োজনে ছিল নাচ,গান ও কবিতা।
শিল্পী অসিত বিশ্বাসের এসরাজ বাদনের মধ্য দিয়ে সকাল সাড়ে সাতটায় উৎসবের উদ্বোধন ঘটে।এরপর নাচের মুদ্রা, সুরের ঝংকার আর কবিতার দীপ্ত উচ্চারনে বর্ণিল হয়ে উঠে উৎসব প্রাঙ্গণ চারুকলার বকুলতলা। উৎসবের সেই রঙ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
অনুষ্ঠানে ‘সুর ও বিহার’ এর শিশু-কিশোর শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে রবীন্দ্রনাথের গান ‘নয়ন ভুলানো এলে’, আয়োজক সংগঠনের শিল্পীরা দলীয়ভাবে পরিবেশন করে ‘দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলে চায়’, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবশেন করে নজরুলের গান ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমার’। আরো দলীয়সংগীত পরিবেশন করে পঞ্চভাস্কর, গীতাঞ্জলি, বহ্নিশিখার শিল্পীরা। এতে দলীয়নৃত্য পরিবেশন করে ‘স্পন্দন’,‘বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’, ‘নৃত্যজন’ ও ‘স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র’এর নৃত্যশিল্পীরা। একক কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন সালমা আকবর, বিশ্বাজিৎ রায়, অনিমা রায়, মামুন জাহিদ খান, আবিদা রহমান সেতু, মাহমুদা মৌমিতা, রত্না সরকার।
‘তোমরা যা বল তাই বল’, ‘আগমনী গান শোনা যায়’, ‘এবার অবগুণ্ঠনও খোলো’, ‘শারদপ্রাতে ঝিলের জলে শাপলা শালুক দোলে’ ও ‘হৃদয়ে ছিলে জেগে’ এসব গানের সুরের মূর্চ্ছনায় শরৎ মূর্ত হয়ে উঠে অনুষ্ঠানস্থল। উৎসবে নজরুলের ‘নম নম নম বাংলাদেশ মম’ আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী আহকাম উল্লাহ এবং জীবনানন্দ দাশের ‘নব নবীনের লাগি’ আবৃত্তি করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি।
শরৎ কথন পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
ড. হায়াৎ মামুদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক নিগার চৌধুরী ও মানজার চৌধুরী সুইট।
এদিকে উৎসবের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮ টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘শরৎ ঋতু’ বিষয়ক শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া দিনব্যাপি উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে দলীয়সংগীত পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, উদয়ন, সুর সাগর ললিতকলা একাডেমি ও সমস্বর। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, স্কেচ, আঙ্গীকাম, ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র ও বেনুকা ললিতকলা একাডেমি। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে মুক্তধারা সংস্কৃতি ও আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ইকবাল খোরশেদ জাফর, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, রেজীনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু, জহিরুল আলম, আহসান তমাল ও আজিজুল বাশার মাসুম। একক সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব ঘোষ, মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সরদার রহমত উল্লাহ, খগেন্দ্রনাথ সরকার, আকরামুল ইসলাম, খন্দকার মুজিবুল কাইয়ুম, তানজিলা তমা, শাহনেওয়াজ পারভীন ইলা, তামান্না নিগার তুলি, সমর বড়ুয়া, পল্লব গোমেজ, সানজিদা মঞ্জুরুল হ্যাপি, রাবেয়া আক্তার, শ্রাবণী গুহ রায়, মীরা মন্ডল, এস এম মেজবা, মাহমুদা তাবাসসুম বৃষ্টি, নবনীতা জাহিদ চৌধুরী অনন্যা, আনজুমান ফেরদৌস কাকলি, তাহমিনা আক্তার মুক্তি, মিজানুর রহমান আজাদ, জীবন চৌধুরী, মতিউর রহমান, সেলিম, রকিবা খান লুবা, সৌমক সাহা ধ্রুব প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :