এস এন জামান, বেলজিয়াম: একুশে আগস্টের রক্তাক্ত হামলায় আহত একজন মানুষের নাম নীলা চৌধুরী। বাবা শহীদ মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল আলীম, মা শাহজাদা চৌধুরী আজীবন জড়িত ছিলেন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে। নীলা চৌধুরীরও রাজনীতি শুরু মায়ের হাত ধরে। নিজেকে আওয়ামী লীগের নেত্রীর চেয়ে একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিংয়ে থেকেছেন প্রথম সারিতে। ২০০৪ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদিকা ছিলেন নীলা চৌধুরী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগ পর্যন্ত সবই ছিলো স্বাভাবিক। একুশে আগস্টে বোমা হামলায় আহত হয়ে সুইডেনে এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন শতাধিক স্প্লিন্টার। চোখ বন্ধ করলে এখনো তাঁকে তাড়া করে ফেরে সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি।
হামলা সম্পর্কে নীলা চৌধুরী বলেন, চোখ বন্ধ করলেই পুরো ঘটনাই ভেসে ওঠে। জানতে চাইলে সেই স্মৃতির ঝাঁপিই খুলে বসলেন। জানালেন, ঘটনার দিন অনুষ্ঠান শুরুর বেশ আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে। ট্রাক দিয়ে তৈরি মঞ্চে ওঠার সিঁড়ির দুপাশে অনেকের সঙ্গে তিনিও দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন , ‘নেত্রী বক্তৃতা শেষ করলেন। জয় বাংলা বলে জয় বঙ্গবন্ধু বলারও সুযোগ পেলেন না। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। আমার পায়ে প্রচণ্ড জ্বলুনি অনুভব করলাম। প্রচণ্ড শব্দে কানে তালা লেগে গেছে। ট্রাকের ডালাটা হাতে ধরা আছে।
দেখলাম, দুহাতে কান ঢেকে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা। আমি চিৎকার করে বলার চেষ্টা করছিলাম, নেত্রীকে বাঁচাও। মনে হচ্ছিল, একদল লোক নেত্রীকে ঘিরে ট্রাক থেকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার মধ্যে একটা ধারণা এসেছিল, ওই লোকগুলি নেত্রীকে হত্যা করতে নিয়ে যাচ্ছে। ওই সময় আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে এবং সামনে আহত-নিহত অনেকে পড়ে আছেন।’ নীলা বলছিলেন আর আবেগাপ্লুত হচ্ছিলেন, ‘আমি দেখলাম আমাদের পার্টি অফিসের সামনের ড্রেনটা যেন রক্তের স্রোতে ভরা। আমি তখনো ট্রাকের ডালা ধরে দাঁড়িয়ে। ছোট দুই ছেলের কথা মনে হতে বাঁচার আকুতি জেগে উঠল। ডান পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে গিয়ে সাড়া পাচ্ছিলাম না। দেখলাম, হাঁটুর কাছ থেকে শাড়ি রক্তে ভেজা। হাঁটার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম। নীলা জানালেন, ‘জ্ঞান যখন ফেরে তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালের বিছানায়। মাথার পাশে মা বসে আছেন। পরে জেনেছি, আমাকে প্রথম ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। পরে আনা হয় শমরিতা হাসপাতালে।
পাঁচ দিনের মাথায় জ্ঞান ফেরে। এর মধ্যে জেনে গেলাম নেত্রী বেঁচে আছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার এমন ভয়াবহ বর্ণনা আতঁকে উঠার মতো। নীলা চেীধুরীর নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়, থেরাপি নিতে হয়। দেশের অবস্থা, রাজনীতি সবকিছুই তাঁকে টানে। সুইডেনেও রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। সুইডেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা তিনি। দেশের কেউ গেলে বা কারও সঙ্গে সাক্ষাত হলে আতিথিয়তার কমতি নেই রাজপথে সক্রিয় এই নেত্রীর। আপ্যায়ন করেন। দেশের খোঁজখবর নেন। গল্পে চলে ২১ শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আবারও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে চান নীলা চৌধুরী।
লেখক: বেলজিয়াম প্রবাসী সাংবাদিক
আপনার মতামত লিখুন :