অবৈধ যানবাহন নিয়ে কথা হলেও তা বন্ধের উদ্যোগ কার্যকর হয় না। এই অবৈধ যানবাহন ঘিরে আছে অবৈধ আয়ের বিশাল একটি চক্র। অভিযোগ এই চক্রে পুলিশ, পরিবহণ নেতা, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আরো অনেক ক্ষমতাবান জড়িত। ডয়েচে ভেলে
গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে লেগুনা (হিউম্যান হলার) চলবে না। কিন্তু তার এই ঘোষণা কার্যকর হয়নি। এর কারণ প্রধান সড়কে পুলিশের স্লিপ নিয়েই চলাচল করে লেগুনা। এই লেগুনার নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। তারা প্রধান সড়কে চলাচলের রুট পারমিট দেয় না, ঢাকার ভিতরের সড়কগুলোতে চলাচলের অনুমতি দেয়। নিবন্ধন পাওয়া লেগুনার সংখ্যা পাঁচ হাজার। কিন্তু ঢাকা এবং আশপাশে চলাচল করে প্রায় ৩০ হাজারের মত লেগুনা। শুধু প্রধান সড়কেই নয়, ঢাকার আশপাশের মহাসড়কেও চলাচল করে।
বিআরটিএর হিসাবে সারাদেশে বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার, হিউম্যান হলার ও মোটর বাইকসহ নিবন্ধিত যানবাহন ৪০ লাখ। এরমধ্যে চার লাখ যানবাহনের কোনো ফিটনেস নাই বলে জানায় তারা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী ফিটনেসবিহীন যানবাহনসহ সারা বাংলাদেশে অবৈধ যানবাহন ১৫ লাখেরও বেশি।
ঢাকায় যারা লেগুনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের সাথে চুক্তি করেই লেগুনা চালানো হয়। একটি লেগুনা সাধারণভাবে কথিত রুট পারমিটের জন্য পুলিশকে এক হাজার টাকা দেয় মাসে। এর বাইরে স্টপেজ চাঁদা এবং অনস্পট চাঁদা দিতে হয়। বিআরটিএ এপর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার প্রাইভেট অটোরিকশার লাইসেন্স দিয়েছে। এগুলো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য নয়। কিন্তু ঢাকায় পুলিশের সাথে চুক্তি করে এইসব প্রাইভেট অটোরিকশা বাণিজ্যিকভাবে চলছে। এই চুক্তি হয় মূলত ট্রাফিক সার্জেন্টদের মাধ্যমে। আর মালিকদের মধ্যে পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন। গত বছর এই প্রাইভেট অটোরিকশার বাণিজ্যিক চলাচল বন্ধের চেষ্টা করেও তা সফল হয়নি।
বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে অবৈধ যানবাহন তিন পর্যায়ে চাঁদা দিয়ে সড়কে চলাচল করে। প্রথমত: তারা ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশকে চুক্তির মাধ্যমে মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমান চাঁদা দেয়। দ্বিতীয়ত: পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনকে চাঁদা দেয় এবং তৃতীয়ত তারা স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দেয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের সাথে চুক্তির মাধ্যমে চলাচলকারী অবৈধ যানবাহন সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া। তারা কাউকে মানেনা। আর একারণে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়ে যায়। তারা ভাড়ার ক্ষেত্রেও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। ঢাকায় একটি বাস থেকে দিনে গড়ে চাঁদা ওঠে দুই হাজার টাকা। লেগুনা ও সিএনজি অটোরিকশা থেকে সাতশ টাকা।’
বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী দাবী করেন, ‘অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব বিআরটিএর নয়, দায়িত্ব পুলিশের। বিআরাটিএ শুধু যেসব যানবাহনের লাইসেন্স দেয় সেগুলোর ব্যাপারেই ব্যবস্থা নিতে পারে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরাতো ব্যবস্থা নিচ্ছি। ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই-তিন হাজার গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়। মাসে মামলা হয় এক লাখ। অবৈধ যানবাহন চলাচলে পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘যারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের ডেপুটি কমিশনারদের কাছে অভিযোগ করুন। অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে গত জুন মাসে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা শহর থেকে অবৈধ যানবাহন অপসারণের জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছিলেন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে। দুই মাসের মধ্যে ওই কমিটির অবৈধ যানবাহন চিহ্নিত করার কথা। কিন্তু সেই কাজ কতটুকু হয়েছে জানাতে পারেনি ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। সম্পাদনা : কায়কোবাদ মিলন
আপনার মতামত লিখুন :