শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ০৬:০২ সকাল
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ০৬:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মোজাফফর আহমদ মুজিব নগর সরকারে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিন্তু স্বাধীনতা পদক প্রত্যাখান করেছিলেন

দেবদুলাল মুন্না: ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার যে ছয় সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র মোজাফফর আহমদই বেঁচেছিলেন। উপদেষ্টা কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, মনোরঞ্জন ধর ও খোন্দকার মোশতাক আহমদ। আহ্বায়ক ছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। শেষোক্ত দুজন ছাড়া বাকি সবাই আওয়ামী লীগের বাইরের মানুষ এবং তিনজনই বামপন্থী। মাওলানা ভাসানী ও মোজাফফর আহমদ ছিলেন ন্যাপের নিজ নিজ অংশের সভাপতি; মণি সিংহ কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এবং মনোরঞ্জন ধর ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি। তাজউদ্দীন আহমদ সবাইকে নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন। মোজাফফর আহমদের বয়স আর কয়েকবছর পরই শত বছর পূর্ণ হতো। স্ত্রী আমেনা আহমদ ন্যাপের সহসভাপতি ও সংরক্ষিত আসনে নবম ও দশম সংসদের সাংসদ।মোজাফফর আহমদ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কিন্তু ২০১৫ সালে যখন স্বাধীনতা পদক তাকে দেওয়া হয় তখন অভিমানে তা প্রত্যাখান করেছিলেন।‘এই পদক বর্জনও তার তথাকথিত প্রতিষ্ঠানবিরোধীতার বড়ো পরিচয়’ বলেছিলেন সেসময় লেখক ও বুদ্ধিজীবি বদরুদ্দীন উমর।

মোজাফফর আহমদের জন্ম ১৯২২ সােলর ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বারের এলাহাবাদ গ্রামে। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তার আগে ছিলেন একাধিক কলেজে। চুয়ান্নতে মাত্র ২২ বছর বয়সে মুসলিম লীগের এক মন্ত্রীকে পরাজিত করে প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থাপক সভায় মোজাফফর আহমদ বলেছিলেন, ‘আজ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের যে প্রস্তাব আনা হয়েছে, সেটি আমাদের নেতা মাওলানা ভাসানীর একক কিংবা কোনো একটি দলের দাবি নয়। এটি হলো পূর্ব পাকিস্তানের ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের দাবি। এটি আবেগের কিংবা ভোট লাভের স্লোগান নয়। এটি হলো প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত অভ্যন্তরীণ সব ব্যাপারে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত এ অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা।’পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফায় সেই স্বায়ত্তশাসন পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।
স্বাধীনতা-উত্তর রাজনীতিতে বামপন্থীদের বিচ্যুতি বা দুর্বলতা যত প্রকটই হোক না কেন, স্বাধীনতা-পূর্ব রাজনীতি তথা মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের ভূমিকা খাটো করে দেখার উপায় নেই। ষাটের দশকের মাঝামাঝি বামপন্থীরা মস্কো ও বেইজিং এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মণি সিংহ, মোজাফফর আহমদ, খোকা রায়, মোহাম্মদ ফরহাদ, মতিয়া চৌধুরী, পঙ্কজ ভট্টাচার্য প্রমুখ ছিলেন মস্কো শিবিরে। আর বেইজিং শিবিরে ছিলেন মাওলানা ভাসানী, কাজী জাফর আহমদ, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো প্রমুখ। এ বিভাজন সত্তে¡ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসেবে একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার দল ন্যাপকে নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে ২০ হাজারের বেশি মুক্তিকামী বাঙালিকে নিয়ে গড়েছিলেন বিশেষ গেরিলা বাহিনী। প্রশিক্ষণ শেষে এই বাহিনী ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম, রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের রণক্ষেত্রগুলোতে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া মোজাফফর আহমেদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদান করে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে 'আমাদের মুক্তিযুদ্ধ' শিরোনামে প্রকাশিত বইয়ের ৪১ ও ৪২ পৃষ্ঠায় মোজাফফর আহমেদ নিজেই বলেছেন, 'আমাদের মুুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিন সামাজ্যবাদ, আরব মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ প্রত্যক্ষভাবে এবং গণচীন পরোক্ষভাবে অবস্থান নিয়েছিল। এই নাজুক পরিস্থিতিতে পরাশক্তির অন্যতম সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। এই বাস্তবতা থেকে আমি এবং কমিউনিস্ট পার্টির অবিসংবাদিত নেতা কমরেড মণি সিং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি এবং তাকে বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের চাপের ভয়বহতা ও সাম্রাজবাদী হুমকির পরিণতির যথার্থতা বুঝিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সহায়তা লাভে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য রাজি করাতে সক্ষম হই। বিশ্বের স্বাধীনতা, মুক্তি ও শান্তিকামী মানুষের সমর্থন বাংলাদেশের পক্ষে আনার জন্য সেদিন বিশ্ব শান্তি পরিষদের সম্মেলনে যে প্রতিনিধি দল গিয়েছিল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন ন্যাপ নেতা দেওয়ান মাহবুব আলী। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে আমি (মোজাফফর) উপস্থিত ছিলাম।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়