দেবদুলাল মুন্না: ইউরোপ ও আমেরিকার শহরগুলোতে মাঝে মাঝেই দাবানল ছড়িয়ে পড়ে।শহরে লাগলে বনও রক্ষা পাওয়ার কথা নয়। তাই স্যাটেলাইট ছবি গবেষণা করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্পেস রিসার্চ (ইমপে) দেখতে পেয়েছে, গত জানুয়ারি মাস থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত অ্যামাজন বনে ৭২,৮০০টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের ১৯ অগাস্ট পুরো সাও পাওলো নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই অন্ধকারে ছেয়ে যায়।ধোঁয়ার প্রকোপে বিশ্বের অন্যতম বড় শহর ব্রাজিলের সাও পাওলোকে ঢেকে দিয়েছিল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাও পাওলো আগেভাগে অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পেছনে দক্ষিণ মেরুর ঠাণ্ডা হাওয়া ও অ্যামাজনে লাগা বুনো আগুনের ধোঁয়া ভূমিকা রেখেছে।
পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন বনের আগুনকে আন্তর্জাতিক সংকট বলে উদ্বেগ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি এক টুইটে আমাজন বনের আগুন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লিখেন: আমাদের ঘর পুড়ছে যা পুরো বিশ্বের অক্সিজেনের ২০ শতাংশ যোগান দেয়। আগামী জি ৭ সম্মেলনে তিনি এটিকে প্রথম এজেন্ডা হিসেবে উল্লেখ করবেন বলেও জানান। গত কদিন ধরে দাবানলে জ্বলছে অ্যামাজন বন।
গত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল।কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলেন, এরিনা বনে প্রথম দাবানল ছড়িয়ে পড়ে । সেখান থেকেই শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপদাহ ছড়িয়ে পড়েছে, মহাদেশটির অধিকাংশ দেশেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল গত জুনে। নিজেদের কীভাবে শীতল রাখতে হবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো সে বিষয়ে বিভিন্ন পরমার্শ ইস্যু নিয়ে বৈঠকও করেছিল। জার্মানি, পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিক, এ তিনটি দেশে গত জুন মাসের তাপমাত্রার সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। আসছে দিনগুলোতে গরম আরো বাড়ার পূর্বাভাস থাকায় পূর্ববতী অনেক রেকর্ডই ভাঙবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, উত্তর আফ্রিকা থেকে বয়ে আসা অত্যন্ত গরম বাতাসের কারণেই ইউরোপে এ অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। তীব্র গরম জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে বলে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন ফ্রান্সের কর্মকর্তারা। মার্কিন পরিবেশবিজ্ঞানী ব্রাড ক্লার্ক সিএনএনকে বলেছেন, ‘বিশ্বের ফুসফুসে বারুদের স্তুপ জমা হয়েছে।তাই দাবানলের ঘটনা ঘটছে এবং দিনদিন এর মাত্রা আরও বাড়বে। যদি না আমরা পরিবেশ রক্ষায় মনোযোগী না হই।’ তীব্র ও ভয়াবহ দাবানল পরিবেশের ওপর বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাব যে ফেলে এ নিয়ে কিন্তু কোন মতভেদ নেই কারও মধ্যেই। দাবানল পরিবেশে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ছাড়াও বিভিন্ন দুষণ-পদার্থের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, যা মানুষসহ সব প্রাণির জন্য বড় ধরণের হুমকি।এদিকে ব্রাজিলের পরিবেশ দফতর বলছে, অ্যামাজনের বনে দাবানলের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা বন পুড়িয়ে চাষের জমি বের করার জন্যও বনে আগুন দিচ্ছে। দেখা গেছে, ব্রাজিলের রাজ্য রোনডোনিয়া এবং অ্যার্কে এবং প্রতিবেশী বলিভিয়া এবং প্যারাগুয়ের বিশাল আগুন থেকে ধোঁয়ার উৎপত্তি হওয়ার পর সেটা দক্ষিণ দিকে ভেসে আসছে। এই সংখ্যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৮৩ শতাংশ বেশি।ইমপের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে যে, ২০১৮ সালে সবমিলিয়ে ৭৫০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল হারিয়ে গেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি।
এদিকে ব্রাজিলের সরকার অ্যামাজন বন উজাড় ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। শুধু গত মাসেই ২২০০ কিলোমিটার বনাঞ্চল খালি করা হয়েছে, যা গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ২৮০ শতাংশ হারে বেশি। তবে সমালোচনা উড়িয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব সংখ্যা বিশেষ উদ্দেশে সাজানো হয়েছে। যা মনে হচ্ছে সরকার এবং ব্রাজিলের ওপর আঘাত করার জন্য।’এর জেরে গত কয়েকদিন ধরে জার্মানি এবং নরওয়ের সরকার ব্রাজিলের আমাজন ফান্ডে অর্থ অনুদান বন্ধ করে রেখেছে। নরওয়ে গত এক দশকে একশো বিশ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :