আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল : কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করেছি? আসলে আমিও জানতে চাই সার্বিক বিবেচনায় কোন পক্ষ নেয়া যৌক্তিক... পাকিস্তান নাকি ভারতের পক্ষ? দু’দেশের কেউই কিন্তু তাদের ভূখ- ছাড়তে রাজি নয়, তাই সমগ্র কাশ্মীর রাষ্ট্র হবে এমন চিন্তা কল্পনাবিলাস মাত্র। সংবিধানের কথা বলেন, কাশ্মীরের সংবিধানের ৩নং ধারায় ওই রাজ্যকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষণা করা হয়েছে। কাশ্মীরিরা রোহিঙ্গাদের জন্য মিছিল-সমাবেশ করে। অথচ কাশ্মীরের অন্তত ১২ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব নেই। গত ৭০ বছর ধরে তারা নিজ দেশে পরবাসী। তিন প্রজন্ম ধরে তাদের কেউ সরকারি চাকরি পায়নি কারণ ভারতীয় নাগরিকত্ব নেই। ৭ লাখ ৭০ হাজার দলিতকে অমানুষ বলে গণ্য করে তারা কোন ‘নিজামে মুস্তাফা’ কায়েমের দাবি করে? যারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা চেয়ে গণভোটের কথা বলছেন তারা সম্ভবত এমন গণভোটকে ‘বহুদলীয় হ্যাঁ/না’ ভোট মনে করছেন।
আন্তর্জাতিক যে আইনে কোনো রাজ্যকে স্বাধীন হওয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে তার শর্ত হচ্ছে ৯০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। রাজ্যের ৫টি জেলার নির্দিষ্ট অংশে অস্থিরতা চলছে, ১৫টি শান্ত। ভোটে ভারত/পাকিস্তান/স্বাধীন তিনটি অপশন দেয়া হলো, ফলাফল কি হবে? উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, রাজ্যটির নাম কিন্তু কাশ্মীর নয়, জম্মু ও কাশ্মীর। কাশ্মীরের সবাই যদি স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয় তাহলেও ভোট পড়বে আনুমানিক ৬০ শতাংশ, জম্মুর ৪০ শতাংশই ভারতের পক্ষে যাবে। সুতরাং আন্তর্জাতিক মহল চাইলেই কাশ্মীর স্বাধীন হবে না। তবু কেন গণভোট দিচ্ছে না? প্রধান কারণ হচ্ছে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি থাকায় কিছু জঙ্গি নেতা ছাড়া অন্যরা ভারত থেকে আলাদা হওয়ার দাবি করে না। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষে যদি ১০ শতাংশ লোকও ভোট দেয় তা ভাবমূর্তির পাশাপাশি আংশিক বিচ্ছিন্নতার পথ সৃষ্টি করবে।অনেকে জওহরলাল নেহরুর বানোয়াট বক্তব্য প্রচার করছে। কেউ বলছেন ৪৭-এর আগেও কাশ্মীর, ভারত ও পাকিস্তানের অংশ ছিলো না। কিন্তু ৪৭-এর আগে পাকিস্তান আসে কীভাবে? ব্রিটিশ রাজের অধীনে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও রাজ্য ছিলো। অন্যান্য রাজ্যের মতোই ৪৭ সালে ভারতের অধীনে নিঃশর্ত অন্তর্ভুক্তি ঘটে। গোয়া ৬১ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ কলোনী ছিলো। ভারত ভাগ নিয়ে যখন আলোচনা চলছিলো তখন কাশ্মীরের একাংশের ইন্ধনে পাকিস্তান আক্রমণ করে। জেনে দেখুন কাশ্মীরের নারীদের ধর্ষণ করার জন্য পাকবাহিনী তাদের দখলকৃত জায়গায় দু’দিন অবস্থান না করলে অন্তত অর্ধেক কাশ্মীর তারা দখলে নিতে পারতো। তৎকালীন রাজা নিঃশর্ত অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিলে ভারতীয় সেনা পাঠানো হয়। তখনকার সব মুসলিম নেতারা ভারতের সঙ্গে থাকার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
আর্টিকেল মানুষ ও দেশের প্রয়োজনেই প্রণীত হয়। যে কারণে কাশ্মীরের ৩নং ধারা অস্বীকার করে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা হয়, তেমন কারণেই ৩৭০ বাতিলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়। এছাড়া স্বাধীনতার প্রশ্ন ওঠে যখন সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হয়, শোষণের শিকার হয়। কাশ্মীরের একজনও এমন দাবি করতে পারবে না। সেখানে গণতন্ত্রের সংকট থাকতে পারে, এতে আমাদের করণীয় কিছু নেই।
আপনার মতামত লিখুন :