ইসমাঈল হুসাইন ইমু : বিভিন্ন মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট জব্দ করা বহু গাড়ি থানাগুলোতে পড়ে আছে বছরের পর বছর। আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় এসব গাড়ি থানার হেফাজতে পড়ে থাকে অযত্ন-অবহলোয়। গাড়িগুলো দেখে মনে হয়, থানাগুলো যেন অলিখিত ডাম্পিং স্টেশন।
শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী, কাফরুল, পল্টন, বাড্ডা, ভাটারা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুরসহ মহানগরের বেশ কয়েকটি থানা ঘুরে দেখা যায় জরাজীর্ণ বহু গাড়ির এমন দশা।
মামলা-হামলা, দুর্ঘটনা, মাদক পরিবহন, অবৈধ মালামাল বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে আটক হয়, বাইক, ট্রাক, প্রাইভেট কার, সিএনজি ও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। মামলা শুরু থেকে তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত থানাগুলোতে শেড বা ছাউনিহীন খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে অযত্নে পড়ে থাকে এসব জব্দকৃত গাড়ি। এক পর্যায়ে এসব যানবাহন নষ্ট হতে হতে ব্যবহার উপযোগিতা হারায়। থানাগুলো যেন অলিখিত ভেহিকল ডাম্পিং স্টেশন।
মোহাম্মাদপুর থানায় জব্দ হওয়া মোটরবাইক সম্পর্কে লিটন নামের একজন বলেন, তিন মাস আগে আসাদগেটের কাছে দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম। নিজের ক্ষতির পাশাপাশি বাইকটাও খোয়ালাম। খোলা আকাশের নিচে, ঝড়ে বৃষ্টিতে চোখের সামনে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে শখের গাড়িটা। মামলা চলছে, শেষ হবে কবে ধারণা করতে পারছি না। বাইকের একটা গ্লাস সম্ভবত চুরি হয়ে গেছে। তিন দিন আগে এসেও দেখেছি। আজ দেখলাম না। এখন আর গাড়ির প্রতি আগ্রহ খুব একটা কাজ করছে না। জব্দকৃত গাড়ি রাখার জন্য রাজধানীর আগারগাঁওয়ে, মিরপুরে ও কাঁচপুরে গাড়ির ডাম্পিং স্টেশন থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত বলছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
তেজগাঁও থানায় দেখা যায়, থানার ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জব্দকৃত অচল গাড়ি। কোনোটির সিট নেই, কোনোটির দরজা নেই, কোনোটির চাকা চুরি হয়ে গেছে, কোনোটির আবার গ্লাস উধাও, আবার কোনোটির শুধু বডিটুকু পড়ে আছে। এগুলো এতোটাই বেহাল ও ভাঙাচোরা যে ভাঙারির দোকানে বিক্রির যোগ্য।
এইভাবে অরক্ষিত অবস্থায়, চরম অযত্নে-অবহেলায় ফেলে রাখার ফলে গাড়িগুলো নষ্ট হতে হতে বহারের অনুযোগী হয়ে যাচ্ছে। মালিক গাড়ি ফেরত পেলেও তা ব্যবহার করতে পারবে কিনা জানতে চাওয়া হলে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তো মালিককে গাড়ি ফিরিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ না পাওয়ায় এসব গাড়ি নিলামেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। অথচ এসব গাড়ি থানাপ্রাঙ্গণের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রাখছে। এতে একদিকে যেমন গাড়ির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে থানার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।
ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন বলেন, প্রতিটি থানায় একটি করে বড় শেড থাকে যেটা ডাম্পিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু জব্দকৃত গাড়ির সংখ্যা এত বেশি যে সেখানে গাড়ি আর ধরে না। এ কারণে এসব যানবাহনকে থানা চত্বরে ফেলে রাখা হয়। সম্পাদনা : মিঠুন
আপনার মতামত লিখুন :