শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ০৩:৪৯ রাত
আপডেট : ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ০৩:৪৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চামড়ার দরপতনে কওমি মাদ্রাসাগুলি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া : দশ-পনের বছর পূর্বে চামড়ার যে মূল্য ছিল তা নিন্মমুখী হতে হতে এ বছর চামড়ার মূল্যে চরম ধস নেমেছে। এক সময় যে চামড়ার মূল্য আঠাশ, তিন হাজার টাকা ছিল তা এ বছর দুইশ, তিনশ' টাকায় বিক্রি হয়েছে। কুরবানীর দিন ঢাকার বাইরে দশ টাকা থেকে নিয়ে দেড়শ, আড়াইশ টাকাতে বিক্রি হয়েছে বলে পাওয়া গিয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে কোথাও কোথাও ক্রেতা না পেয়ে মাটিতে চামড়া পুঁতে ফেলা হয়েছে। কোথাও বা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। কোন কোন জেলায় সড়কে রেখে চামড়ার দরপতনের প্রতিবাদ জানান হয়েছে। অথচ যে কয়টি দ্রব্য রফতানির মাধ্যমে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা লাভ হয় তার মধ্যে চামড়ার অবস্থান দ্বিতীয়।

প্রতি বছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে গণমাধ্যম সার্কুলার দেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত দেখা যায় সরকারের ঘোষিত মূল্য থেকে কোরবানির দিন বেশি দামে চামড়া বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত দুই তিন বছর যাবত এর উল্টো হচ্ছে। এ বছর যে লজ্জাজনক দরপতন হয়েছে তা প্রকাশ করার ভাষাও খুঁজে পাচ্ছি না।

পত্রিকায় প্রকাশ, চামড়ার দরপতন নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ১৮ আগষ্ট সচিবালয়ে সরকার, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের ত্রিপাক্ষীয় বৈঠক হয়। সেখানে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, চামড়ার দর ধস নামাতে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে ছিল সিন্ডিকেট। চামড়ার দামে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং আড়তদাররা পরস্পর দোষারোপ করলেও দুই সংগঠনের নেতাদের এক জায়গায় অভিন্ন বক্তব্য ছিল-কম দরে চামড়া কেনার কৌশল অবলম্বন করা। আড়তদারদের অভিযোগ ট্যানারি মালিকদের থেকে পূর্বের টাকা পাননি। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, ব্যাংক থেকে টাকা পাননি তারা। এখন প্রশ্ন হল, তাহলে চামড়া কেনার জন্য দেয়া ৭শ কোটি টাকা গেল কোথায়?

এদিকে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, চামড়ার দর বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। জনমনে প্রশ্ন- চামড়ার দরের বিপর্যয় তো এবছরই কোরবানির দিনে প্রথম হয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরেই চামড়ার মূল্য নিম্নমুখী। গত কোরবানির পর থেকে নিয়ে পুরো বছরই চামড়ার মূল্য আশংকাজনক হারে নিম্নমুখী ছিল। গোটা বছরই দুইশ, তিনশ টাকায় লাখ টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। দেশের অন্যতম রফতানি জাত পন্যের দরপতন হতে দেখেও সরকার পূর্ব থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি কেন? সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এব্যাপারে কি বেখবর ছিল? নাকি কারো স্বার্থ রক্ষার্থে নীরবতা পালন করে কৃতজ্ঞ বান্দার দায়িত্ব পালন করছিলেন? এ ধরনের নানা প্রশ্ন জনমনে উঁকি মারছে। শিল্পমন্ত্রীর দাবি চামড়ার দরপতনের পিছনে বিএনপির ষড়যন্ত্র ছিল। এ ধরনের বক্তব্য দেয়া ক্ষমতাসীনদের চিরাচরিত স্বভাব। নিজেদের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, অব্যবস্থাপনা ও অন্যায়ের দায়ভার প্রতিপক্ষের উপর চাপিয়ে থাকেন।

উল্লেখ্য, দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে। এবছর কমপক্ষে এক কোটি ১৮ লাখ পশুর চামড়া কেনাবেচা হওয়ার কথা। এর মধ্যে গরু, মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৮২ হাজার। ছাগল, ভেড়া ৭২ লাখ। এছাড়া ছয় হাজার ৫৬৩ অন্যান্য পশু। পোস্তার ব্যবসায়ীদের মতে চামড়ার ভয়াবহ দরপতনের কারণে ৩০ শতাংশ চামড়া এবছর নষ্ট হয়েছে। এর অর্ধেকই গরুর চামড়া। শিল্পমন্ত্রীর দাবি হল, মাত্র দশ হাজার চামড়া নষ্ট হয়েছে। শিল্পমন্ত্রীর দাবির সাথে বাস্তবতার কতটুকু মিল রয়েছে? অতীতের কোন সময়ে এত পরিমানে চামড়া নষ্ট হয়নি। বিগত ৩১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমদামে এবার চামড়া বিক্রি হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যে দেশের কোথাও চামড়া বিক্রি হয়নি। দরপতনের কারণে চামড়া খাতে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার রফতানি আয় কমে যাওয়ার আশংকা করছে ব্যবসায়ীরা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ চামড়া ও চামড়াজাত পন্য রফতানি করে ১০৩ কোটি ডলার আয় করে। যা আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া খাতে রফতানি আয় ছিল ১২৩ কোটি ডলারের চেয়ে বেশি। (ইনকিলাব ২১/৮/৩০১৮)

চামড়ার দরপতনে বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মহাসচিবের মতে, পশ্চিমবঙ্গের আমাদের সীমান্ত বেনাপোলের একশ কিলোমিটারের মধ্যে বামতলা নামে একটি জায়গায় একটা ছোট চামড়া নগরী আছে। ইদানিং সেই নগরীকে বড়ভাবে পরিণত করা হচ্ছে এবং সেখানে ৮০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। গো হত্যা বন্ধের কারণে ভারতের কানপুরের ট্যানারি গুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানকার মালিকরা ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশের সীমান্তে ট্যানারি শিপ্ট করার জন্য। তাঁদেরকে বামতলায় ট্যানারি শিপ্ট করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরো যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাদের প্রতিবাদের ভাষা ভিন্ন হলেও বক্তব্য ছিল অভিন্ন। এ একই কারণে পোষাক শিল্পও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্ধ থাকা পাটকলগুলো স্বাধীনতার পর চালু হওয়ার কথাও মানুষের মুখে মুখে শুনা যায়।

চামড়ার দরপতনে কওমি মাদ্রাসাও অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে একটি কথা সকলকে স্মরণ রাখতে হবে যে, কওমি মাদ্রাসা কেবলমাত্র চামড়া নির্ভর নয়। মাদ্রাসার গোরাবা ফান্ডের দশ ভাগের এক বা দুই ভাগ কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রি লব্ধ অর্থ দ্বারা পুরণ হয়ে থাকে। কওমি মাদ্রাসা গুলো আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে পরিচালিত হয়। কোন ব্যক্তি বা নির্ধারিত আয় নির্ভর নয়।

আমার মতে চামড়ার দরপতনে কওমি মাদরাসা চেয়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এটা সোনার বাংলা কে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র। যারা বাংলাদেশের উন্নতি চায় না তারা তাবেদারদের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে যাচ্ছে। আধিপত্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদের নির্ভরতাকে নিশ্চিত আরো সুদৃঢ় করার পথ সুগম করার জন্য দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো পর্যায়ক্রমে সুকৌশলে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সকল দেশপ্রেমিক ঈমানদারদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোন পথ নেই। আল্লাহ আমাদের সকলকে সুমতি দান করুন।’ ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়