আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কংক্রিটের পিলার, গাছের গুড়ি, মাটি খুঁড়ে ব্যারিকেড নির্মাণের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন অবরুদ্ধ কাশ্মীরের ‘গাজা’ নামে খ্যাত সৌরাপাড়ার বাসিন্দারা। কাশ্মীরের মূল শহর শ্রীনগরের উপকণ্ঠেই সৌরাপাড়া। নিরাপত্তা বাহিনী যাতে সেখানে ঢুকে পড়তে না পারে- সে জন্যই প্রবেশ পথটিতে সুরক্ষা দিচ্ছেন তারা। এএফপি
লেকের পাশে ঘনবসতিপূর্ণ এ পাড়াটিতে দুই হাজার বসতি রয়েছে। এটির তিন পাশেই নিরাপত্তা বাহিনী ঘিরে রেখেছে। ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে পুলিশ বাহিনী অন্তত তিন বার সেখানে ঢুকতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু কিশোর ও তরুণরা কেবল পাথর ছুড়েই তাদের ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। কারো কারো হাতে তখন কুঠার ও হারপুনও দেখা গেছে।
বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ মরিচের গুড়া ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা লবণাক্ত পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে আবার বিক্ষোভে নেমে পড়েন। ছররা গুলি থেকে সুরক্ষা পেতে তারা হেলমেটও ব্যবহার করছেন।
প্রতিরাতে স্থানীয়রা সরু গলি দিয়ে মিছিল নিয়ে বের হন। মশাল হাতে সেই বিক্ষোভ নিয়ে সামনে এগিয়ে যান। আর সেই মশালের আলোতে দুই পাশের দেয়ালের গ্রাফিতি ভেসে ওঠে। যাতে লেখা রয়েছে, ‘কাশ্মীরের আজাদি চাই’, ‘ভারত যা, ফিরে যা’।
মূল সড়কে কোনো নিরাপত্তা বাহিনী দেখতে পেলে স্থানীয়রা পাড়ার ভেতর সেই খবর ছড়িয়ে দেন।
নাহিদা নামের এক স্থানীয় নারী বলেন, যদি বছরের পর বছরও এ পরিস্থিতি চলতে থাকে, তবু তারা আমাদের হারাতে পারবে না। আমরা কখনই আত্মসমর্পণ করব না। শেষ পর্যন্ত আমরা তাদের পরাজিত করব।
রাতে পাড়াটিতে স্বেচ্ছাসেবী প্রহরী হিসেবে কাজ করেন মুফিদ নামে এক স্থানীয়। তিনি বলেন, তারা(ভারতীয় বাহিনী) কেবল আমাদের লাশের ওপর দিয়ে সৌরাপাড়ায় ঢুকতে পারবে। আমরা এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও ভারতকে ছেড়ে দেব না।
গত ৯ আগস্ট অন্তত ১৫ হাজার লোকের অংশ নেয়া বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছে সৌরাপাড়াটি। এ পর্যন্ত কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ছিল যেটি। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে তাজা গুলি, টিয়ার গ্যাস ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করে। এতে দুই ডজনের বেশি লোক আহত হন।
সৌরাপাড়ায় কঠিন প্রতিরোধ সত্ত্বেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অচলাবস্থা চালু হওয়ার পর কাশ্মীর শান্ত রয়েছে।
বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে এ সৌরাপাড়া। কাশ্মীরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ এখানেই জন্ম নিয়েছেন। স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেয়ার শর্তে তিনি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি হয়েছিলেন।
তার ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টি ভারতীয় শাসনের অধীনে আরও বেশি স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই চালিয়ে আসছে।
তিন দশকের বেশি এই দলটি কাশ্মীর শাসন করেছে। শেখ আবদুল্লাহর ছেলে ফারুক আবদুল্লাহ ও নাতনি ওমর আবদুল্লাহও রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
কিন্তু স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা বাতিলের সময় ফারুক ও ওমর আবদুল্লাহকে আটক করেছে নয়াদিল্লি।
পাড়াটির বাসিন্দা রফিক মানসুর শাহ বলেন, ভারতীয় শাসন মেনে নিতে আবদুল্লাহর সিদ্ধান্তের পর স্থানীয়রা হতাশা ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রফিক মানসুরের মতো সৌরার বাসিন্দারা মনে করেন, আমাদের ভূখণ্ড দখল করতে নয়াদিল্লির দূরভিসন্ধিপূর্ণ পরিকল্পনা রয়েছে। রফিক মানসুর বলেন, আবদুল্লাহর পরিবার ক্ষমতার জন্য লোভাতুর হওয়ায় আমরা ভারতীয় দাসে পরিণত হয়েছি। আমরা এখন ঐতিহাসিক ভুল সংশোধনের চেষ্টা করছি। কাশ্মীরকে উজ্জ্বীবিত করতে আমরা নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :