ডেস্ক রিপোর্ট : ১৮ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টা। প্রশাসনের প্রাণ কেন্দ্র সচিবালয়ের ক্লিনিক ভবনের একটি চেয়ারকে কেন্দ্র করে জটলা। চেয়ারে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে কিলবিল করছে কিছু একটা। অল্প কিন্তু পরিষ্কার ওই পানিতে ‘অ্যারোসল’ স্প্রে করা হচ্ছে। তারপরও থামছে না ওই কিলবিল। যুগান্তর
পরে শক্ত কাগজ দিয়ে পিষে ফেলা হল সেগুলো। কি হয়েছে- জানতে চাইতেই সেখানে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শাহ আলম জানালেন, ‘এগুলো ডেঙ্গু জীবাণুর বাহক এডিস মশার লার্ভা। অ্যারোসল দেয়ার পরেও মরেনি বলে তা পিষে ধ্বংস করা হল।’
এটি শুধু সচিবালয় ক্লিনিকের চিত্র নয়। দেশের অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ভবনের পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ার, অফিস সরঞ্জাম, অচল যানবাহন, ফুলের টব বা নির্মাণাধীন ভবনে মশকের লার্ভা থাকার বিষয়টি প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে।
এ মুহূর্তে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারে পৌঁছেছে। সরকারি হিসাবেই মৃত্যুর সংখ্যা ৪৭-এ দাঁড়িয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে সরকারি সব দফতরে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মশার লার্ভা জন্মানোর উপযোগী সব স্থান ধ্বংস এবং পরিত্যক্ত বস্তু অপসারণ করতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। পাশাপাশি এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সব সিটি মেয়র, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের চিঠি দেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি সব অবকাঠামোতে জমাকৃত পানিতে এডিস মশার প্রজনন হয়ে থাকে।
তাই শুধু বেসরকারি ভবনের মালিকদের সচেতন হলেই হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা যেখানে দায়িত্ব পালন করেন তাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই এ ধরনের চিঠি বা পরিপত্র জারি করা হয়েছে।’
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে দেয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠিতে বলা হয়- প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত সব রোগ প্রতিরোধকল্পে ২৫ জুলাই থেকে দেশব্যাপী মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বিগত দিনগুলোতে মশার বিস্তাররোধ ও উৎপত্তিস্থল ধবংসের জন্য এ মন্ত্রণালয় থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চলছে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও। কিন্তু ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি দফতর/সংস্থা/কার্যালয় বা এর আঙ্গিনায় বিভিন্ন পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ার, অফিস সরঞ্জাম, অচল যানবাহন, ফুলের টব ইত্যাদিতে এবং নির্মাণাধীন ভবনে মশার লার্ভা জন্মানোর উপযোগী পরিবেশ থাকার বিষয়টি সরকারের গোচরীভূত হয়েছে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এমতাবস্থায় দেশব্যাপী ‘মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম’ এর সফল বাস্তবায়ন ও কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে আপনার মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন সব দফতর/সংস্থা/কার্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মশার লার্ভা জন্মানোর উপযোগী সব উৎস ধ্বংস করা এবং পরিত্যক্ত বস্তু অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।
এর দু’দিন আগে ১৮ আগস্ট মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার ব্যাপকভাবে অব্যাহত রাখতে সব সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়- ‘ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত সব রোগ প্রতিরোধকল্পে দেশব্যাপী মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
উক্ত কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মশার বংশ বিস্তার রোধ ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার জন্য জনসচেতনতামূলক প্রচার ব্যাপকভাবে অব্যাহত রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সানুগ্রহ অনুশাসন প্রদান করেছেন। এমতাবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন সকল দফতর/সংস্থা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্যোগে সচেতনতামূলক পোস্টার, লিফলেট, টিভিসি ইত্যাদি মিডিয়া উপকরণ ব্যাপকভাবে প্রচারের পাশাপাশি উপযুক্ত উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে মশার বংশ বিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিনই বাড়ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মশক নিধন ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না।
বিশেষ করে সরকারি দফতরগুলোতে এর সুফল হতাশাজনক। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদারকি করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে না ধরনের নির্দেশনা ও অনুশাসন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সব মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠি দেয়া হয়েছে।