শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০১৯, ০২:৫১ রাত
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০১৯, ০২:৫১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডেঙ্গু প্রতিরোধে একজন উদ্যোক্তার কাজ 

রেন্টিনা চাকমা : ডেঙ্গু যখন খুব দ্রুত মানুষের মাঝে সংক্রামক আকারে ছড়াতে থাকে, তখন নাহিদ তাঁর ৩ বন্ধুকে ( বাপ্পাদিত্য বসু, অভি, সৈকত ভৌমিক) নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধী উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করে। জুলাই মাসের ২৬ তারিখের সেই আলোচনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার থেকে তাঁদের পথ চলা। দলে যোগ দেয় আরও ৬ জন। যার মধ্যে রয়েছে ছাত্রছাত্রী, ডাক্তার, সাংবাদিকসহ আরও বহু পেশাজীবী।

মাঠ পর্যায়ে এডিস মশার লার্ভা দমনের কার্যক্রমে নামার আগে নাহিদের ভাবনাটাও ছিল ব্যতিক্রম ও আনন্দদায়ক। তিনি উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে সরেজমিনে গিয়ে জমানো পানিতে ২০ থেকে ২৫ টি লার্ভা খুঁজে পান। জমানো পানিটি ছিল ফেলে দেয়া পুরনো দইয়ের প্লাস্টিকের বাক্সে। খুঁজে পাওয়া সেই লার্ভা তিনি নিয়ে আসেন নিজ বাসায়। ১ দিন পর সেই লার্ভা পরিনত হয় এডিস মশায়।

৪ টা বড় ও ২ টা ছোট স্প্রেয়ার মেশিন, কেমিক্যালস, মাস্ক, হাত মোজা এবং হেড কভারসহ বেশ কিছু উপাদানের পেছনে ১৪ হাজার টাকা খরচ করে শুরু হয় তাঁদের ডেঙ্গু প্রতিরোধী কার্যক্রম।

আগস্টের ২ তারিখ সকাল ১১ টায় মগবাজার মধুবাগ ক্লাবের মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে প্রথম এডিস লার্ভা নিধনের কাজ শুরু করে নাহিদ ও তাঁর বন্ধুরা। মাঠের পাশে কিছু ভবনের নিচের খালি জায়গা এবং ছাদে বেশ কিছু লার্ভা খুঁজে পায় তাঁরা। এছাড়া মধুবাগের কিছু ফ্ল্যাটে ফ্রিজের ট্রেতে জমানো পানিতে পাওয়া লার্ভাও ধ্বংস করে তারা। যেসব ফ্ল্যাটের একটিতে ছিল ডেঙ্গু আংক্রান্ত ৬ বছরের বাচ্চা।

মধুবাগের মাদ্রাসা, বস্তিতে গিয়ে পরিচ্ছনতা অভিযান চালায় তারা। ওখানকার কমিটির সঙ্গে ডেঙ্গু প্রতিরোধী সচেতনতা বিষয়ে আলোচনা করতেও ভোলেনা তাঁরা। সব মিলিয়ে মধুবাগের ২০ টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা নিধনের কাজ সম্পন্ন করে নাহিদের দল।

এছাড়া আজিমপুর রায়হান স্কুল এন্ড কলেজ, নিকেতন এ ব্লক, ধানমন্ডি ৩ নম্বর, মালিটোলা এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধী কার্যক্রম সফলভাবে সম্পাদন করে তারা। এসব কার্যক্রম চলে আগস্টের ২ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত। এর মধ্যে অপরিচ্ছন্নতার দিক থেকে নিকেতনকে বস্তির সঙ্গে তুলনা করা যায় বলে মনে করেন নাহিদ।

সর্বশেষ ৯ আগস্ট ইস্কাটন এলাকায় মাঠ পর্যায়ে মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজ করে তারা। ওইসময় তাঁরা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ছাদেও লার্ভা খুঁজে পায় । ইস্কাটনের কার্যক্রমে মিতালী হোসেন নামের এক লেখক ও সমাজসেবককে ধন্যবাদ জানান নাহিদ। কারন ওইসময় পুরো আর্থিক সহযোগিতা তিনিই দিয়েছিলেন।

এই উদ্যোগের বিষয়ে নাহিদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক সানিয়া তাহমিনা ছাড়াও অন্যান্য অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেন। ইন্টারনেটের তথ্য নিয়ে করেছেন গবেষণা। যেখানে তিনি জানতে পারেন কোথায় লার্ভা জন্মাতে পারে ।

কথা প্রসঙ্গে নাহিদ দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে বলেন, মূলত ঈদে আনন্দের জন্য জমানো টাকা দিয়েই ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাঠে নামি আমরা । আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে।

আমাদের পরিকল্পনা ভবিষ্যতে টানা কাজ করা। দৃঢ়তার সঙ্গে এগোলে ডেঙ্গু সংক্রমন ও মৃত্যুর হার ৮০ শতাংশ কমাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি আমি। লক্ষ্য হিসেবে বললেন, মশার পাশাপাশি একটা পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা। পরে আমাদের কার্যক্রমকে গ্রামেও ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা আছে।

নাহিদ এনাম পেশায় ব্যবসায়ী। রকি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ট্রেডিং কোম্পানির মালিক তিনি। সেই সুবাদে চায়না থেকে এই কার্যক্রমের জন্য তিনি ৭০০০ টাকায় আনতে পারছেন ফগার মেশিন, যার দাম বাজার মূল্য সর্বনিম্ন ১৫০০০ টাকা।

ফগারের ঔষধ মশা দমনে ঠিকভাবে কাজে না লাগার পেছনে সিটি কর্পোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দোষী মনে করেন তিনি। মূল ঔষধের ১০০ ভাগের ১০ ভাগ মশা দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ১০ ভাগ ঔষধের সঙ্গে যোগ করা হচ্ছে পানি । যেটি অকার্যকরভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

ব্যক্তিগতভাবে বা সাংগঠনিকভাবে অনেকে মনে করেন সরকারের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিজেকেও উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই ডেঙ্গু থেকে পরিত্রান সম্ভব । ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য উদ্যোগী হয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন ঠিক তেমনই একজন । তিনি হলেন নাহিদ এনাম। তবে নাহিদ একা নয়। দশ জন মিলে কাজ শুরু করা দল এখন ২৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

মূলত, এই উদ্যোগের মূল ভাবনাকারী হলেন নাহিদ এনাম। নর্ডান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে মাস্টার্স পাশ করা নাহিদ ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন। মা আফরোজা এনাম ও বাবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মুন্সি এনামুল হক। নাহিদের বাবা একসময় কাজ করেছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থায়। তাই তিনি চেয়েছিলেন, ছেলে বড় হয়ে তাঁর মতই কিছু একটা হবে। তবে স্বাধীনভাবে কাজ করার ইচ্ছা থেকে নাহিদ নিজে কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তাই তাঁর এই উদ্যোগ ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়