নিউজ ডেস্ক : দেশে ঋণের যে সুদহার, তা নিয়ে সরকারের শীর্ষমহলও উদ্বিগ্ন। দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রতিযোগী ও প্রতিবেশী ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের প্রকৃত সুদহার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণা থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। এদিকে দেশের উদ্যোক্তারা বলছেন, নমিনাল সুদহারের তুলনায় প্রকৃত কার্যকর সুদহার অনেক বেশি। দৈনিক আমাদের সময়
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণা-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, শ্রীলঙ্কায় ঋণের প্রকৃত সুদহার ৯ শতাংশ, আলোচ্য ছয় দেশের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদহার ইন্দোনেশিয়ায়। ভারতে ঋণের প্রকৃত সুদহার ৬ শতাংশেরও বেশি। এর পরই ভিয়েতনামের অবস্থান। ভিয়েতনামের প্রকৃত সুদহার সাড়ে ৪ শতাংশের মতো। আর বাংলাদেশের সুদহার ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ প্রকৃত সুদহার রয়েছে পাকিস্তানে।
উল্লেখ্য, প্রকৃত সুদহার নির্ণয় করা হয় নমিনাল সুদহার থেকে মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়ে। গত জুনে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের নমিনাল গড় সুদহার ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ আর আমানতের গড় সুদহার ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ জুনে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের গড় প্রকৃত সুদহার ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আমানত গড় প্রকৃত সুদহার নেগেটিভ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতার বিপরীতের আমানতকারীরা যে পরিমাণ অর্থ জমা রাখছেন তার চেয়েও কম অর্থ ফেরত পাচ্ছেন। জমা রেখে লাভ দূরের কথা আসল টাকায় ক্ষয়ে যাচ্ছে আমানতকারীদের। আমানতের বিপরীতের টাকা ক্ষয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে। এর পর থেকেই নেতিবাচক ধারার কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন জমাকারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে সুদহার এত কম হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর জন্য দফায় দফায় নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ জন্য তারা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। সুদহার কমানোর জন্য ব্যাংকের মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নানা সুবিধাও দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। ঈদের আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে উচ্চসুদহার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ১৪, ১৫, ১৬ শতাংশ সুদহার হিসাব করে কী লাভ, দিতে পারবে না; এতে শুধু খেলাপি ঋণই বাড়বে। খুব শিগগিরই আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ এবং ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে কন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া চক্রবৃদ্ধি সুদহার পরিহার করে সরল সুদ পদ্ধতি ব্যবহারের নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নেমে আসেনি। ফলে অনেকেই ঋণ নিচ্ছেন না। সুদহার অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে।
পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, মুদ্রানীতির ঘোষণায় দেখানো হয়েছে নমিনাল সুদহার ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কিন্তু প্রকৃত কার্যকর সুদহার ডাবল ডিজিট। এ উচ্চসুদহার শিল্প প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :