রাজশাহী প্রতিনিধি : ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পথে নির্মমভাবে খুন হন রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র ফারদিন ইসনা আশারিয়া ওরফে রাব্বি (১৯)। তাকে খুন করেন নেশায় আসক্ত ফুটপাতের চায়ের দোকানদার মো. রনক (২৩)।
হত্যা মামলার আসামি মো. রনক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।শনিবার রাতে রাজশাহী মহানগর পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করে।
পুলিশ জানায়, আসামি মো. রনকের বাড়ি নগরের হেতেমখাঁ ছোট মসজিদের পাশে ও বর্ণালী হলের পেছনে। ওই এলাকায় সে ফুটপাতে চায়ের দোকানদার।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুসের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ আগস্ট ভোর প্রায় সাড়ে ৫টার দিকে হেতেমখাঁ ছোটমসজিদ সংলগ্ন পুরাতন পাঁচতলা ভবনের সামনে পাকা রাস্তার ওপর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে কলেজছাত্র ফারদিনকে হত্যা করা হয়। ফারদিন সেদিন ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেন ধরার জন্য তিনি ভোরেই বের হন।
পরদিন পুলিশ ৭ দশমিক ২ গ্রাম হেরোইনসহ মো. রনককে গ্রেপ্তার করে এবং তাকে আদালতে সোপর্দ করে। এ হত্যা মামলার তদন্তকালে পুলিশ প্রাপ্ত তথ্য ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর বর্ণনায় জানতে পারে, রনক ওই হত্যায় সরাসরি জড়িত। পরদিন তাকে ফারদিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিন তাকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।বুধবার আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি রনক উক্ত হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যমতে তার বাসার শয়নকক্ষ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি ১৫ ইঞ্চি ধারালো দা আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।
শনিবার রনক রাজশাহী মহানগর হাকিম-৫ আদালতের বিচারক সেলিম রেজার কাছে হত্যার ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করে। সে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
রনক তার জবানবন্দিতে জানায়, তিনি বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। ঘটনার দিন একাই ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তার পরিহিত গেঞ্জির ভেতর দা লুকিয়ে রাখেন। ভোর প্রায় সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলের কাছে আমরুর কনফেকশনারির পাশে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ওত পেতে থাকে। ওই সময় ফারদিন তিতুমীর ট্রেন ধরার উদ্দেশে ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে নগরের বর্ণালীর মোড়ের দিকে যেতে থাকেন। তখন আসামি রনক ফারদিনের পথরোধ করে দা বের করে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ফারদিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক সময় ফারদিন আসামি রনককে ফেলে দেন এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন।
এতে আসামি রনক রেগে গিয়ে পেছন থেকে ফারদিনের মাথায় দা দিয়ে সজোরে কোপ মারেন। তার মাথা গুরুতর জখম হয়। তিনি মাটিতে পড়ে যান। আসামি রনক ধরা পড়ার ভয়ে টাকা, ম্যানিব্যাগ, মোবাইল ও ব্যাগ না নিয়েই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
আসামি রনক হেরোইন কেনার টাকা সংগ্রহের জন্য একা দা হাতে ছিনতাই করতে গিয়ে এই হত্যা করে বলে তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।
রনক দাবি করেন, তিনি ওই কলেজছাত্রকে আগে তিনি চিনতেন না। ঘটনার পর বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন তিনি রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং মেসে বসবাস করতেন।
ফারদিন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মোমিনপুর গ্রামে।
আপনার মতামত লিখুন :