আক্তারুজ্জামান : ২০১২ সালেই পরপারে চলে গেছেন বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের জনপ্রিয় একটি পেজ ‘পয়েম ভাইন’এ সম্প্রতি তার একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানেই উঠে এসেছে বিশ্বসাহিত্যে বাংলার স্থান নিয়ে লেখকের ভাবনার কথা। আমাদের সময় ডটকম পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো।
বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের তুলনামূলক দ্বন্দ্ব, সাহিত্যের নোবেল এবং রবীন্দ্রনাথ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।বিশ্বসাহিত্য ও বাংলা সাহিত্য নিয়ে শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা সুবিধা হলো, বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় যা লেখা হচ্ছে, সেটা আমরা পড়তে পারি কিন্তু আমরা যা লিখি তা অন্যরা পড়তে পারে না। মূলত ভারতীয় ইংলিশ বিশ্ব সাহিত্যে সেভাবে জায়গা করে নিতে না পারায় এরকমটা হচ্ছে বলে মনে করেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
বিশ্ব বাজারে ভালো বিক্রেতা পেলেও নিজের কোন অবস্থান তৈরি করতে পারেননি কোনো ভারতীয় লেখক। এমনটাই মনে করেন তিনি। বিশ্ব সাহিত্যে কিংবা ইংরেজি সাহিত্যে কোনো ভারতীয়র নাম খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে বই বিক্রি হওয়া আর সাহিত্যে জায়গা পাওয়া এক বিষয় না।
বিশ্বসাহিত্যে জায়গা পেতে হলে অনুবাদ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং দক্ষ অনুবাদক দরকার এমন মতের সঙ্গে তিনি ঐকমত্য পোষণ করার পাশাপাশি এটার চেষ্টা হচ্ছে বলেও জানান।
নোবেল পাওয়া সাহিত্যের চেয়েও বাংলাতে মাঝে মাঝে উন্নত কিছু সাহিত্য রচিত হয় বলে জানিয়েছেন সুনীল। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ঢোঁড়ায় চরিত মানস’ কাব্যগ্রন্থের কথা। যেটা যে কোনো ভাষার ক্ষেত্রেই দুর্লভ।
তার্কিশ লেখক ওরহান পামুকের নোবেল পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, নোবেল এখন লবিং হয়ে গেছে। প্রতি বছরে এমন একজনকে দেয়া হয় যে দেশ থেকে আগে কেউ পায়নি। যদিও পামুক ভালো লেখেন বলেও মন্তব্য করেন। তো এক্ষেত্রে বাংলা কেন পাবে না, জানতে চাইলে সুনীল বলেন বাংলাতে আসলে সেভাবে কোনো অনুবাদ করা হয় না। যার ফলে বাংলা থেকে কেউ আর নোবেল পাবে বলে মনে হয় না।
বাঙালি লেখকদের চেয়ে ইউরোপিয়ান লেখকরা অনেক সময় পান লেখার জন্য। যেটা তাদের সাহিত্যের মান বাড়িয়ে তোলে। একথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বাংলার প্রখ্যাত এ লেখক। বলেন, সময় বেশি পেলেও যে লেখা ভালো হবে এটাও কোনো কথা না। কেননা সাহিত্য বিষয়টা লিও তলস্তয় সবসময় লিখতেন কিন্তু তার কোনো লেখাকেই কেউ খারাপ বলতে পারেননি।
রুশ সাহিত্য নিয়ে তিনি বলেন, তাদের সোনালী সময়টা শেষ। যখন তলস্তয়, দস্তভেস্কি ও চেকভের যে ধারা সে ধারা এখন আর নেই। সেভাবে কেউ লেখে না। তাদের গোল্ডেন এজ ওখানেই শেষ।
বিশ্বসাহিত্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধারা গ্রহণ করেছে কিন্তু বাংলা সাহিত্য দ্বারা কখনো প্রভাবিত হতে পারেনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্য আছে এটাই তো মানুষ জানলো না। এমনকি রবীন্দ্রনাথকেই মানুষ ভুলে গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অটোয়াতে একটি কবি-লেখকদের সম্মেলনে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন সুনীল। যেখানে বিশ্ববিখ্যাত ১২জন সাহিত্যিককে বাংলা ভাষা ও রবীন্দ্রনাথ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১ জন বলেছিলেন, হ্যাঁ বাংলা নামে একটা ভাষা আছে আর রবীন্দ্রনাথ নামে একজন কবি আছে শুনেছি। কিন্তু কখনো পড়ে দেখিনি। খুব আক্ষেপ নিয়েই লেখক এ কথা বলেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ আর বাংলা নিয়ে আমরা নিজেরা যে গর্ব করি সেটা এখন আর নেই। সারাবিশ্ব এখন বাংলা আর রবীন্দ্রনাথকে ভুলে গেছে। এটাই বাস্তবতা। এ কারণেই বিশ্বসাহিত্যে বাংলা কোনো স্থান নিতে পারছে না। মূলত প্রাচ্য সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহের কারনে সেই সময়ে বাংলা জনপ্রিয় ছিলো। এখন মানুষ পুরোটা জেনে গেছে যে কারণে আর বাংলার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই।সম্পাদনা : মুরাদ হাসান
https://www.facebook.com/veinpoem/videos/495447161203462/?t=1
আপনার মতামত লিখুন :