শিরোনাম
◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০১৯, ০৯:০৬ সকাল
আপডেট : ১৩ আগস্ট, ২০১৯, ০৯:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজনীতিতে ‘প্রভাবশালী’ হয়ে উঠছে ইসলামী আন্দোলন

সারাবাংলা : সাংগঠনিক শক্তি, অনুগত কর্মী বাহিনী, রাজপথে সক্রিয় কর্মসূচি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রাজনৈতিক তৎপরতা, আর্তমানবতার সেবায় বিশেষ ভূমিকা, জাতীয় সংকটে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ, নানামুখি সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বড় দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বার্ষিক আয়-ব্যয়ের দিক থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৪৩টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম নেতৃত্বাধীন ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ অন্যতম। ইসিতে নিবন্ধিত ধর্মভিত্তিক ১০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সাংগঠনিক শক্তির দিক থেকে ‘ইসলামী আন্দোলন’ সবার শীর্ষে রয়েছে বলে ধারণা রাজনীতি বিশ্লেষকদের।

সূত্র মতে, নীতি নির্ধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ‘বড়’ রাজনৈতিক দলের মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র ‘কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা’ নামে একটি নীতি নির্ধারণী ফোরাম রয়েছে। ২৮১ সদস্য বিশিষ্ট এই কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার মতমতের ভিত্তিতে দলের নীতি নির্ধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একজন আমির, একজন সিনিয়র নায়েবে আমির, দুইজন নায়েবে আমির, একজন মহাসচিব, চারজন যুগ্ম মহাসচিবের পদ রয়েছে। এই পদগুলোতে এই মুহূর্তে দায়িত্ব পালন করছেন যথাক্রমে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, আব্দুল হক আজাদ, আব্দুল আউয়াল, অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ, মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন, হাসমত উল্লাহ আল ফরায়েজি, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও গাজী আতাউর রহমান।

অর্থাৎ মূলধারার রাজনৈতিক দলের মতোই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র নেতৃত্বের স্তরবিন্যাস করা হয়েছে। অধিকন্তু কেন্দ্রে সব কিছু পুঞ্জিভূত না করে বড় ৯টি পদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পদ ঢাকার বাইরে থেকে পূরণ করা হয়েছে। খুলনার পীর মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির এবং কুমিল্লা মুরাদনগর কলেজের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানকে যুগ্ম মহাসচিব পদে বসানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ৩০ ভাগ নারী কোটাও পূরণ করেছে ইসলামী আন্দোলন।

দলীয় সূত্রমতে, দেশের সবগুলো জেলা তো বটেই ৮৫ ভাগ ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। গত ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের আগেই বেশিরভাগ সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করেছে ইসলামী আন্দোলন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মজবুত সাংগঠনিক ভিতের কারণেই গত দুই দশকে অনুষ্ঠিত চারটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে তিনটিতে একক রাজনৈতিক দল হিসেবে কেবল ইসলামী আন্দোলনই ৩ শ’ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ইসলামী আন্দোলনের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। গত বছর অনুষ্ঠিত রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির দিক থেকে ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান ছিল তিন নম্বরে। অর্থাৎ সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং ইসিতে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের চেয়েও এগিয়ে ছিল ইসলামী আন্দোলন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু সাংগঠনিক কাঠামো এবং ভোটের মাঠে বুক উঁচিয়ে লড়াই নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও রাজপথ দখলের আন্দোলনৈ অন্যদের থেকে এগিয়ে আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গত বছর ৫ অক্টোবর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে সমাবেশ করেছিল দলটি, সেটি ছিল সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সব চেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির চেয়ে কয়েকগুণ বড় ওই সমাবেশ অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থানে বার্তা দিয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেকেই।

সম্প্রতি ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও কাশ্মীর ইস্যুতে ব্যাপক শো-ডাউন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। যে ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা) অনেকটা হিসেব করে পা’ ফেলছে এবং রাজপথের বিরোধীদল বিএনপি টু-শব্দটুকু করছে না, সেই ইস্যুতে ইসলামী আন্দোলন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছে। এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে দলটি। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনেরও প্রতিবাদ জানায় তারা।

রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি দেশের সংকটকালে সামাজিক কর্মসূচিও পালনে অন্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে পিছিয়ে নেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বন্যায় দুর্গত এলাকায় অব্যাহতভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও বান্দরবান জেলায় বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে ইসলামী আন্দোলন। দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এবং দলীয় ফান্ড থেকে টাকা উঠিয়ে বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে তারা। রাজধানীর হতোদরিদ্র মানুষের জন্য দলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি পশু কোরবানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইসলামী আন্দোলন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিদল আওয়ামী লীগ এবং রাজপথের বিরোধীদল বিএনপির মতো ডেঙ্গু নিয়ে ব্লেইম গেইম না খেলে রাজধানীতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) ইসলামী আন্দোলনের আমীর ইমতিয়াজ আলমের নেতৃত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা মহানগর (উত্তর) ইসলাম আন্দোলনের আমীর ফজলে বারী মাসউদের নেতৃত্বে ঢাকা ‍উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মশক নিধনে কাজ করছে দলটি। প্রায় প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা, জনসচেতনতায় লিফলেট বিতরণ এবং মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ করছে ইসলামী আন্দোলন।

আয়-ব্যয়ের দিক থেকেও পিছিয়ে নেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) ২০১৮ সালের আয় যেখানে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। সেখানে ইসলামী আন্দোলনের আয় ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫০ টাকা। জাতীয় পার্টি গত বছর ব্যয় করেছে ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আর ইসলামী আন্দোলন ব্যয় করেছে ৩ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের দিক থেকেও সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাপার থেকে এগিয়ে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন।

দলীয় সূত্রমতে, ইসলামী আন্দোলনের আয়ের প্রধান উৎস সদস্যদের ইয়ানত (চাঁদা)। যে যেমন আয় করেন, সে তেমন ইয়ানত দেন। প্রত্যেক সদস্যকে প্রতি মাসে এক দিনের আয় জমা দিতে হয় দলীয় ফান্ডে। অর্থাৎ প্রতি মাসে যিনি ৩০ হাজার টাকা আয় করেন, তিনি দলীয় ফান্ডে জমা দেন ১ হাজার টাকা। যিনি ১৫ হাজার টাকা আয় করেন, তিনি জমা দেন ৫০০ টাকা। এভাবে প্রতি বছর একজন সদস্য ১২ দিনের আয় দলীয় ফান্ডে জমা দেন।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্ম চৌধুরী অ্যান্ড কোং ইসলামী আন্দোলনের আয়-ব্যয় নিরীক্ষণ করে। অন্যান্য দলের মতো ইসলামী আন্দোলনেরও আলাদা হিসাব বিভাগ রয়েছে। রয়েছে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো নির্বাচনের আগে আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রির রেওয়াজ নেই ইসলামী আন্দোলনে। বরং অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল প্রার্থীদেরকে দলীয় ফান্ড থেকে নির্বাচনি ব্যয়বাবদ নগদ অর্থ দেওয়া হয়।

অর্থাৎ সব দিক বিবেচনায় এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন প্রভাবশালী হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কেউ কেউ মনে করেন, এ দলটির প্রতি ক্ষমতাসীনদের ‘নেক নজর’ রয়েছে বলেই তারা সব কিছু সহজে করে উঠতে পারছে। নইলে অন্য সব দলের মতো তাদেরকেও নীরবে থাকতে হতো।

অবশ্য সরকারের নেক নজরের বিষয়টি অস্বীকার করে ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাইয়ুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রতি সরকারের নেক নজর থাকলে কাশ্মীর ইস্যুতে জেলা প্রোগ্রামগুলোতে বাধা দিতো না। মূলত, সহিংস কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলার কারণেই আমাদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ এবং সরকার ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়