আহমেদ জিতু : আজ থেকে দশ বছর আগেও দেখছি দেশে অবস্থিত বিদেশি এনজিওরা সরকার ও বিরোধীদলের এমপি-মন্ত্রীদের যার যার কর্মক্ষেত্র নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতো। যেমন মা ও শিশু স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম, পুষ্টি ও ডায়রিয়া, পানি ও হাইজিন, শিক্ষা ও সামাজিকতা ইত্যাদি। বছরের শুরুতেই নানা এনজিওর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতো বছরব্যাপী এমপি-মন্ত্রীদের ট্রেনিংয়ের সিডিউল নেয়া। তারপর সংসদ ভবনে তাদের ঠিক সময়ে আনা, ট্রেইনার বাছাই করা, ভালো খাবার ও সম্মানী দেয়া ইত্যাদি।
এমপি-মন্ত্রীদের প্রশিক্ষণে আসার ব্যাপারটাও এলাহি কারবার। একেকজন একেক সময় আসেন। ট্রেইনার বা এনজিওর কর্মকর্তাদের কথা বা প্রশিক্ষণে কারও কোনো আগ্রহ থাকে না, সবাই ক্ষমতার র্যাংকিং অনুযায়ী একজন আরেকজনের সঙ্গে বসতে চাওয়া, নিজের এলাকার সমস্যা তুলে ধরা ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ট্রেইনার নিজের মতো করে পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন দিয়ে যায়। এমপি-মন্ত্রীরা উচ্চস্বরে ফোনে কথা বলতে থাকে এলাকার ডিসি-এসপিদের সঙ্গে। অল্প বয়সী উঠতি এনজিও কর্মকর্তাদের কাছে ডেকে মাঝে মাঝে কানে কানে জিজ্ঞেস করেন, ‘ভাই এসব কখন শেষ হবে?’, ‘আমার বক্তব্য কখন?’, ‘খাম দেবেন কখন’, ‘আমার আরেকটা মিটিংয়ে যেতে হবে’ ইত্যাদি। এনজিওগুলোও বার্ষিক উদ্বৃত্ত বাজেট থেকে মুক্তি পেতে কোনোভাবে আট ঘণ্টার পাঁচ দিনের ট্রেনিং তিন দিনে আধবেলায় টেনেটুনে শেষ করতে পারলে বাঁচে।
সঙ্গে প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি তোলা যায়। শেষ দিনে ভাগ্য ভালো থাকলে সার্টিফিকেট দিতে আসবেন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার। দাতা সংস্থা দুই পেইজের সেই রিপোর্টে ৩২ জন এমপি, ৯ জন মন্ত্রী, ২ জন স্পিকারের ছবি দেখে ভাবে, যাক তাদের টাকায় বাংলাদেশে এবার গণতন্ত্র নিশ্চিত, সকল সামাজিক সমস্যার সমাধান। যাই হোক, আমার উদ্দেশ্য এসব কাজকারবারে এভালুয়েশন নয়। আমি ভাবতেছি পিএইচডি শেষ করে দেশে গিয়ে এই লাইনে একটা সৎ ও হালাল ব্যবসা করবো। এমপি-মন্ত্রীদের সাত দিনের বুনিয়াদি কমিউনিকেশন প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এই কার্যক্রমে এমপি-মন্ত্রীরা নিজের রুমে কী কথা বলবেন, ড্রাইভারের সঙ্গে কী বলবেন, সেক্রেটারির সঙ্গে কী বলবেন, টিভি ক্যামেরাসহ মিডিয়ার সামনে কী বলবেন, ক্যামেরা না থাকলে পত্রিকার সাংবাদিকদের সঙ্গে কী বলবেন ইত্যাদি সব বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ চলাকালীন পূর্ববর্তী মন্ত্রী-এমপিরা কে কোন কথা বলে কী প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন সেগুলোও অডিও-ভিডিও ব্যবহার করে দেখানো হবে। আমাদের বেতনভুক্ত বিভিন্ন পত্রিকা ও চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে একদম রিয়েল লাইফে কনফ্রনটেশন প্র্যাকটিসের ব্যবস্থাও থাকবে। সঙ্গে থাকবে যেকোনো প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট কোরআন-হাদিসের আয়াত মুখস্থ বলার দক্ষতা। প্রত্যেক এমপি-মন্ত্রীকে ন্যূনতম ২০টি করে আয়াত মুখস্থ করিয়ে দেয়া হবে যা যেকোনো প্রশ্নের উত্তরের শেষে তারা বলবেন। যাদের মুখ হাসি হাসি, তাদের প্লাস্টিক সার্জনদের সহায়তায় মুখম-লের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনে সহায়তা করা হয়। যারা যেকোনো প্রশ্নের উত্তরে বেয়াকফের মতো হাসি দেন, তাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও বুলবুল যেভাবে প্রতি ম্যাচে ভয়াবহভাবে হেরে কালবোশেখীর চাইতেও কালো মুখ করে মাঠ ছাড়তেন, সেই ট্রেনিং দেয়া হবে।
বাংলাদেশ উন্নত দেশ, কিন্তু তার সঙ্গে ডেঙ্গুর কোনো সম্পর্ক নেই, এই ধরনের ১০০ এমসিকিউ স্টাইল প্রশ্নোত্তরও মুখস্থ করানো হবে। কী, আমার এই হালাল ব্যবসার আইডিয়া আপনাদের কেমন লাগতেছে? কেউ ব্যবসায়িক পার্টনার হইতে চাইলে আওয়াজ দিয়েন। প্রভাবশালী বাবা বা শ্বশুর থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রশিক্ষণে আর কী কী কন্টেন্ট থাকতে পারে, সেই আইডিয়া দিয়েন। আর আমি আসার আগে কেউ এই ব্যবসা নামায়ে ফেললে ৫০ শতাংশ কমিশন দেবেন। নইলে পোস্টের তারিখ দেখিয়ে সিধা মামলা কইরা দিমু মামা। ফেসবুক থেকেকুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিকেল গার্ডেন :
আপনার মতামত লিখুন :