ইকবাল আনোয়ার : মেয়েটি তার মায়ের ছবি দেখে কাঁদছে। কী নির্মম! এতো ছোট বয়সে সে তো জানে না কি তীব্র নির্মম নির্দয় দেউলিয়া সময়ে আমাদের বসবাস। সে তো জানে না এখানে সূর্য উঠে রোজ, কিন্তু আঁধার কাটে না। সমাজের ক্যান্সার তার নির্দোষ মাকে তার কচি বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। যেকোনো সুস্থ বিবেক এতে হাহাকার করে উঠতে বাধ্য। মানুষ নামধারীদের এই বর্বর কাজের জন্য সমাজ এ শিশুটিকে কি সান্ত¡না দেবে? কী ব্যাখ্যা দেবে? কোন মুখে তাকে নীতিকথা শিক্ষা দেবে? মানুষ সম্পর্কে তার কী ধারণা জন্মাবে! এ শিশু বড় হয়ে নষ্ট হয়ে গেলে, তাকে কি একা দায়ী করা যাবে? সে যে নরক প্রত্যক্ষ করলো, সে নরকের বাসিন্দা যদি সে হয়ে যায়, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মাতৃহত্যার বিচার করতে গিয়ে বড় হয়ে অঘটন ঘটায়, তাকে কি একা দোষ দেয়া যাবে? দোয়া করি পরম দয়াময় তাকে এ আঘাত সইবার শক্তি দেন। বড় হয়ে সে জাতিকে পথ দেখাক, একজন সমাজ সংস্কারক হয়ে। প্রশ্ন হলো কেন এমন হচ্ছে। স্বতঃসিদ্ধ কথা হলো বর্তমান ঘটনা পূর্ব ঘটনার জের।
এক এক করে পর্যায়ক্রমিকভাবে ঘটনা প্রবাহ সাজালে বলা যায়, মানুষ যখন দেখে সত্য অপসারিত, মিথ্যার পোয়াবারো, ন্যায় অপসারিত অন্যায়ের জয় ডংকা, সদাচারের মরণ, অত্যাচারের মহোৎসব। তখন তারা প্রথমে প্রতিবিধান কামনা করে ও প্রচেষ্টা চালায়। না করতে পারলে বা না পেলে হতাশ হয়। মনের ভেতর থেকে মরে যায়। সব কিছু মেনে নেয়। এটাই বিধান ও সেই... একদিন হবে বলে সান্ত¡না পায়। তারপরও না হলে শামুকের খোলসে নিজেকে লুকায়। দেখেও দেখিনি, বুঝেও বুঝিনি পর্যায়ে চলে যায় তারা। অন্যায়ের প্রতিবাদ শক্তি হারিয়ে ‘আফিম’ জীবন বাহিত করে। পথে অন্যায় হলে আফিম মানসিকতায় ও ভয়ে তা দেখলেও নিজে এগিয়ে আসে না। তারপরের পদক্ষেপে এরা অনেকেই অন্যায় উপভোগ করে যেমন ছবি তোলে, ভিডিও করে, শিরা দেখে, মরলো কিনা বা কতো নিদারুণভাবে মরলো তা দেখতে চায়। এমনকি অন্যায় হতে দেখলে নিজের মধ্যেই তা সংক্রামিত হয়, নিজেও অংশগ্রহণ করে ভেতরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের নিরাময় বিকৃত পথে মিটায়। এটি মানসিক রোগ। কমিউনিটি ডায়াগনসিসের দর্শন অনুযায়ী এভাবে ব্যক্তির রোগ সমাজে ছড়ায়। সমাজের স্পোরোডিক মানসিক অবস্থা এভাবে প্যানডেমিক হয়ে রোগাক্রান্ত করে সমাজকে। প্রত্যেক জাতির চলার পথে একপর্যায়ে এমন আসে।
আমাকে অনেকে এসব সাম্প্রতিক বা বহুদিন ধরে চলে আসা দেশে, বিদেশে, মন খারাপ করা, দুঃখজনক ঘটনাসমূহের কারণ কি, জিজ্ঞাসা করে, চিকিৎসক হিসেবে বিশ্লেষণ কি? জানতে চায়। তারই জবাবে এ হলো আমার মনস্তাত্তিক বিশ্লেষণ। এখানে এসবের কারণ সম্বন্ধে বলা হলো যদিও এ আমার একান্ত ভাবনা, আরও কারণ থাকতে পারে, আরও বিশ্লেষণ হতে পারে। কারণ জানলে প্রতিকারের পদক্ষেপ নেয়া কঠিন কিছু নয়। আমি তাই সবসময় আশাবাদী। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :