আসিফ হাসান কাজল : নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার চাপে বদলে গেছে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার পরিবেশ। প্রায় সাড়ে ৮ হাজার একর বনভূমি ও পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণ করায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে শুরু করেছে। গ্রীষ্মের প্রভাবে কক্সবাজার বা চট্টগ্রামের অন্যান্য অংশে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে উখিয়া টেকনাফ এলাকার তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের কর্মের অভাব, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার ক্ষতি, চাষের জমি দখল, উন্মুক্ত স্থানে রোহিঙ্গাদের মল-মূত্র ত্যাগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেপরোয়া অপরাধ কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের বাড়িতে চুরি, রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে ও যৌনবৃত্তিসহ নানা সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা। স্থানীয় বাসিন্দা, এনজিও কর্মী ও প্রশাসনের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৫ লাখ বাসিন্দা। তারা বলছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে অচিরেই নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। উপদ্রব সইতে না পেরে এরই মধ্যে অনেকেই বাসস্থান ছেড়ে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম অথবা ঢাকায় চলে গেছেন। ভিটে মাটির মায়ায় যারা এলাকা ছাড়তে পারছেন না তারা পড়েছেন বহুমুখী সংকটে।
এদিকে টেকনাফ ও উখিয়ায় দিনমজুরদের প্রতিদিনের মজুরি ছিল ৩০০ টাকা। রোহিঙ্গাদের কারণে দৈনিক মজুরির মূল্য বর্তমানে ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে। রিলিফের চাল রোহিঙ্গারা স্থানীয় বাজারে অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করছে। যে কারণে সামগ্রিকভাবে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের প্রশ্রয় দিয়ে এ সংকট আরও তীব্র করে তুলছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। এতে রোহিঙ্গাদের হয় দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো অথবা নোয়াখালীর ভাসানচরে পুনর্বাসন না করলে স্থানীয়রাই ভাসানচরে নিজদের পুনর্বাসনের দাবি তুলছেন। তারা বলছেন, নিজ দেশ নিজ ঘরে আমরাই রোহিঙ্গা হয়ে গেছি। আর রোহিঙ্গারা হয়েছে বাংলাদেশি। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি যেকোনো সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্র জানায়, ক্যাম্পগুলোতে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করলেও কোথাও আবর্জনা পরিস্কারের স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। যার ফলে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন ময়লা আবর্জনা পাহাড়ের খাঁজে স্তুপ আকারে ফেলছে। এছাড়াও স্যানিটেশন ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন পাইপলাইন ও মাটির নিচের ট্যাংক পরিস্কার না করায় অতি বর্ষণ ও বন্যা হলে রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে।
৩৮৮ বর্গ কি.মি এর টেকনাফ ও ২৬১ কি.মি এর উখিয়া উপজেলাতে সব মিলিয়ে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প রয়েছে। টেকনাফে কর্মরত একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী হাসান জেমস জানান, দুই বছর আগেও বন্য হাতিরা যে সড়ক ব্যবহার করতো সেই সড়ক এখন রোহিঙ্গারা ব্যবহার করছেন। বিপুল পরিমাণ বন ও পাহাড় ধ্বংস করায় ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের ৩১৭ প্রজাতির বৃক্ষ ও ৩১৬ প্রজাতির প্রাণি বিলুপ্ত হতে বসেছে।
বন উজারের ফলে বন্য হাতি বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না স্বীকার করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক জগলুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এক ছটাক বনভূমি রোহিঙ্গাদের জন্য উজার করা হবে না। ৮ হাজার বন ধ্বংসের বিকল্প হিসেবে কোনো বৃক্ষ রোপন করার পরিকল্পনা নেই বলেও তিনি জানান। সম্পাদনা : ইসমাঈল ইমু / মিঠুন রাকসাম
আপনার মতামত লিখুন :