শিরোনাম

প্রকাশিত : ২১ জুলাই, ২০১৯, ০৭:৫৩ সকাল
আপডেট : ২১ জুলাই, ২০১৯, ০৭:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিয়েতে ব্যর্থ হয়ে…

ডেস্ক রিপোর্ট  : পাকুন্দিয়ায় নানার বাড়িতে প্রতারক প্রেমিক ও সহযোগীদের হাতে স্কুল ছাত্রী স্মৃতি আক্তার রিমা (১৪) গণধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে নিহত স্কুল ছাত্রীর মা আঙ্গুরা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা এই মামলায় জাহিদ মিয়া (২০), পিয়াস মিয়া (১৮), রুমান মিয়া (১৮) ও রাজু মিয়া (১৮) এই চার জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার চার আসামির মধ্যে জাহিদ মিয়া পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে, পিয়াস মিয়া একই গ্রামের রুবেল মিয়ার ছেলে, রুমান মিয়া গ্রামেরই ফারুক মিয়ার ছেলে ও রাজু মিয়া কফুল উদ্দিনের ছেলে।

 

নিহত স্মৃতি আক্তার রিমা পার্শ্ববর্তী হোসেনপুর উপজেলার জামাইল গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের কন্যা ও হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া চরফরাদী ইউনিয়নের গাংধোয়ারচর গ্রামে নানার বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের একটি বরই গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় স্কুল ছাত্রী রিমার লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওইদিনই বিকালে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে স্মৃতি আক্তার রিমার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তে ধর্ষণের সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে বলে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন।

এদিকে স্কুলছাত্রী স্মৃতি আক্তার রিমাকে গণধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শনিবার পাকুন্দিয়া এবং হোসেনপুর দুই উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

দুপুরে ‘সত্যের পথে আলোর সন্ধানে যুব সংঘ’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। অন্যদিকে দুপুরেই হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বিদ্যালয়ের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, পাকুন্দিয়া উপজেলার গাংধোয়ারচর গ্রামে স্কুল ছাত্রী স্মৃতি আক্তার রিমার নানার বাড়ি। নানার বাড়ি বেড়াতে যাওয়া-আসার সুবাদে পাশের চরফরাদী গ্রামের জাহিদের সাথে রিমার পরিচয় হয়। এই সূত্র ধরে জাহিদ মুঠোফোনে প্রায়ই নানা কথা বলে রিমাকে বিরক্ত করতো। গত মঙ্গলবার বিকালে নানির অসুস্থতার খবর পেয়ে মায়ের সাথে নানার বাড়ি যায় রিমা। খবর পেয়ে বুধবার রাত নয়টার দিকে জাহিদ তার বন্ধু পিয়াস, রুমান ও রাজুসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে রিমার নানার বাড়ি যায়। সেখানে রিমার মায়ের কাছে গিয়ে রিমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় জাহিদ। মা রিমাকে জাহিদের কাছে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় জাহিদ ও তার সঙ্গীরা। এসময় রিমার মা জাহিদকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। তখন জাহিদ ও তার সঙ্গীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রিমা ও তার মাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। পরে মধ্যরাতের দিকে রিমা প্রকৃতির ডাকে বসতঘরের বাইরে একটি টয়লেটে যায়। টয়লেট থেকে ঘরে ফিরতে দেরি হওয়ায় রিমাকে খুঁজতে বের হয় রিমার মা। খুঁজে না পেয়ে বাড়ির পশ্চিম পাশের পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখেন জাহিদ ও তার সঙ্গীরা রিমাকে আটকে রেখেছে। মা রিমাকে ডাকতে থাকলে এসময় জাহিদ রিমার মাকে উদ্দেশ্যে করে বলে, আমি আপনার মেয়ে রিমাকে বিয়ে করব। এই কথা বলে রিমাকে জোর করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে পালিয়ে যায় জাহিদ ও তার সঙ্গীরা। পরে ভোরে ঘুম থেকে উঠে মা আঙ্গুরা খাতুন দেখতে পান, বাড়ির পশ্চিম পাশের পুকুর পাড়ে একটি বরই গাছের সাথে রিমার মৃতদেহ ঝুলানো, রিমার হাঁটু মাটিতে লেগে রয়েছে, ডান হাত ও বাম-পা ভাঙা এবং যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ রক্তাক্ত অবস্থায় রয়েছে। বিয়েতে ব্যর্থ হয়ে রিমাকে অপহরণ করে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয় বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়।

পাকুন্দিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মফিজুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় নিহত স্কুলছাত্রী রিমার মা মোছা. আঙ্গুরা খাতুন বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
এদিকে শনিবার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার)। এ সময় তিনি মামলার বাদী নিহত স্কুল ছাত্রী রিমার মা আঙ্গুরা খাতুন, স্বজন এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) জানান, তদন্তের পাশাপাশি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।

এদিকে স্কুল ছাত্রী রিমাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শনিবার দুপুরে পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ‘সত্যের পথে আলোর সন্ধানে যুব সংঘ’ নামে একটি সংগঠন। বিক্ষোভ মিছিলটি পৌরবাজার প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনে গিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে মিলিত হয়। এ সময় পৌর কাউন্সিলর শরীফুল ইসলাম সুজন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবীর শেখ, সত্যের পথে আলোর সন্ধানে যুব সংঘের উপদেষ্টা বোরহান উদ্দিন, কামাল হোসেন, সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ মাহমুদ মিমশাদ বক্তব্য রাখেন। কর্মসূচিতে মেহেদী হাসান তারেক, রফিকুল ইসলাম বিজয়, রাজিম হোসেন, রাব্বি, তানভীর, অনিক, অন্তর, বিজয়, ফরহাদ, বাজান, রাফি, রিফাতসহ সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। পরে নেতৃবৃন্দ পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমানের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।

অন্যদিকে পাকুন্দিয়ায় নানার বাড়িতে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া স্মৃতি আক্তার রিমার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ফাঁসির দাবিতে রিমার স্কুল হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে তীব্র রোদ উপেক্ষা করে সহপাঠী স্মৃতি আক্তার রিমা ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ফাঁসির দাবিতে হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়সমূহের শ’ শ’ ছাত্রছাত্রী দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই কর্মসূচি পালন করে।

 

এসময় হোসেনপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সোহেল, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী আসমা বেগম, কিশোরগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আফাজ উদ্দিন, হোসেনপুর সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জহির রায়হান, নিহত রিমার মা আঙ্গুরা খাতুন, ভাই মাসুদ মিয়া, সহপাঠী ফারিহা জাহান কেয়া, অন্তি বেগম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা অবিলম্বে স্মৃতি আক্তার রীমা ধর্ষণ-হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সূত্র- মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়