নুরনবী সরকার, লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বাঁধ ও সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ায় তিস্তা নদীর পানি সামান্য বাড়লেই সেই পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। মানুষজনের চলাচলে সমস্যাসহ গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার্ত লোকজনের চিকিৎসা সেবায় মেডিকেল টিম কাজ করলেও গবাদি পশু-পাখির মাঝে বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে।
এলাকাগুলোতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন দেখা মিলছে না। এ ছাড়া স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। ফলে উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ করছে পানিবন্দি লোকজন। নলকূপগুলো বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সেগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্য মতে, সম্প্রতি বন্যায় জেলার ৫ উপজেলায় ২৪ হাজার ৩শত ৩৪টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ফ্রাড রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের দাবি, তারা এ পর্যন্ত প্রায় ১৭হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে পেরেছেন। এ সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে। তবে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উজানে ভারতের তিস্তা অববাহিকায় বৃষ্টিপাতের উপর পানি প্রবাহের এই পরিবর্তন। তবে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে পানি সহসাই নামছে না। পানির এই ওঠা-নামার পার্থক্য সামান্য হওয়ায় দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যার্ত পরিবারগুলোর। গত ৫/৬ দিন আগের তুলনায় বর্তমানে পানির পরিমাণ কম হলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে দুর্গত এলাকার লোকজন। কোথাও কোথাও বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং শুকনো খাবারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। টিউবওয়েল ও পায়খানাগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় মল-মূত্র ত্যাগে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন।
তিস্তা ও ধরলার চরাঞ্চল ও তীরবর্তী ২০টি ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এখোনো পানির নীচে রয়েছে। কোথাও কোথাও পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে, ধসে পড়েছে কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা সড়কের অংশ বিশেষ। ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এসব এলাকার
বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো হলো, সদর উপজেলার মোগলহাট, কুলাঘাট, রাজপুর, খুনিয়াগাছ, আদিতমারী উপজলার মহিষখোচা, হাতীবান্ধী উপজেলার সিঙ্গিমারী, গড্ডিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ও সানিয়াজান ইউনিয়ন। এখানকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছে। এছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের লোকজন বন্যা দুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ ও টিউবওয়েল উচু করার কাজের কথা বললেও সরেজমিনে তাঁদের কর্মকাণ্ড তেমন চোখে পড়েনি।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় ৬ শত ৫০ মে. টন জি আর চাল ও সাড়ে ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবেন।
সম্পাদনা : মিঠুন রাকসাম
আপনার মতামত লিখুন :