শাহীন খন্দকার : যতই দিন যাচ্ছে কমলাপুর রেল স্টেশনে যাত্রী হয়রানির মাত্রা ততোই তীব্র হচ্ছে। যাত্রীদের ব্যাগ বা লাগেজপ্রতি বিশ টাকার মজুরি এখন একশত থেকে তিনশত টাকা। এশুধু ঈদ উৎসব বা পুজোতে নয়, কমলাপুর রেল স্টেশনের নিত্যদিনের চিত্র এখন । কুলিদের হাতে হেনস্থা হচ্ছেন যাত্রীরা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের মালামাল ট্রলিতে আনানেয়ার ভাড়া বিশটাকা নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। কুলিরা যাত্রীদের জিম্মি করে কখনো একশত থেকে পাঁচশত টাকাও নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি ব্যাগকেটে মালামাল ও চুরি করছে কুলিরা। বাড়তি টাকা না দিলে অপমান অপদস্থও করা হয়। ফলে কুলি দ্বারা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেনে ঢাকা আসা যাত্রীদের।
স্টেশনে রয়েছে দুইশত চল্লিশ জন কুলি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন কুলি জানান, ১শ জনের একটি সিন্ডিকেট করে কুলিরা এ নৈরাজ্য কায়েম করেছে। রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং স্টেশন মাস্টার ও ম্যানেজারকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব। তারা কৌশলে মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ মালামাল ট্রেন থেকে নামিয়ে স্টেশনের বাইরে পৌছে দিচ্ছে। খোদ কুলিদের কাছ থেকেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ৪ নম্বর প্লাটফর্মে চট্রগ্রামগামী ট্রেনের যাত্রী ফরিদ আলী আহম্মেদ দম্পতি এক কুলির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ফরিদ আলী জানান, স্টেশনের প্রবেশ পথে ঢুকতেই বাধে বিপত্তি। কোন শৃঙ্খলা নেই। প্রবেশ পথে রিক্সা, ভ্যান, প্রাইভেটকার, বেবীটেক্সির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে পাঠাও মোটর বাইক। এদের জটলা ঠেলেই স্টেশনে প্রবেশ করতে গিয়ে যেনো যুদ্ধে নামার জোগাড়! কোন মতে স্টেশন প্রাঙ্গণে এসে মালামাল বহনের জন্য কুলি ডাকলেও পাওয়া যায় না।
কুলিদের মধ্যে রয়েছে সিন্ডিকেট, সিরায়াল অনুযায়ী তারা মালামাল বহন করেন। তিনি বলেন, একজন কুলি তার তিনটি ব্যাগের মধ্যে একটি বড় দুটি ছোট ব্যাগ তোলার সময় বলেছেন নির্ধারিত দাম-ই সে নেবে। কিন্ত তিন নম্বর প্লাটফর্মে মাল নামানোর পর ৫শত টাকা দাবি করে। না দিলে মালামাল স্টেশনের বাইরে নিয়ে রাখবে বলে হুমকি দেয়। প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গে আরো ৪জন কুলি জোট বেঁধে তাকে অপমান করে। অশালীন বাক্য ছুড়ে দেয়। তাই মানসম্মানের ভয়ে ৪শত টাকায় রফা করেন তিনি।
জানা যায় ঈদের সময়ে কুলিরা হয়ে উঠে আরো বেপরোয়া। গতকাল রাজশাহী থেকে বনলতা এক্সপ্রেসে আসা আলী হামজা তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমরা ‘ঝ’ কোচে ছিলাম, ভিড়ের কারণে লাগেজসহ কিছু মালামাল ট্রেনের জানালা দিয়ে কুলির হাতে দেই। ট্রলিতে করে লাগেজসহ মালামাল স্টেশনের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেই কুলি দাবি করে বসলো ৬শত টাকা ! কুলিকে উত্তরে বললাম ২শত টাকা দেবো। এরপর কুলি তাকে বলে, আপনাকে কেউ ট্রলি দেবে না। আমিও আপনার মালামাল নিবো না। আপনার জিনিষপত্র জানালা দিয়ে নামিয়েছি তার জন্য ২শত টাকা দিন চলে যাবো!
রংপুর এক্সপ্রেস-এর যাত্রী আতিয়ার রহমান ও তার স্ত্রী জানান, পরিবার নিয়ে তিনি রংপুর যাচ্ছিলেন। কাউন্টারের সামনে থেকে ট্রলিতে মালামাল তোলে কুলি। স্টেশনের ভিতরে আনার পরে বলছেন ৮শত টাকা দিতে হবে! পরে বাধ্য হয়ে ৬শত টাকা দিয়েছেন তিনি।
কমলাপুর রেলওয়ে জিআরপি থানার একজন এসআই জানান, কুলিরা টাকা বেশী নিচ্ছে এবিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের নয়। বিষয়টি দেখবেন স্টেশন ম্যানেজার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কুলির বক্তব্য, কেনো কুলিরা টাকা বেশী নিবে না ? নেতাসহ জিআরপি পুলিশ, স্টেশন ম্যানেজারসহ প্রত্যেকটি সেকশনে মাসহারা দিতে হচ্ছে। আর টাকা দিয়েই কুলিদের স্টেশনে কুলির কাজ করতে হচ্ছে। তাই কুলিরাও বাধ্য হয়ে ২০ টাকার জায়গায় নিচ্ছে ৩শ থেকে শুরু করে ৮শ টাকা।
জানা যায়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, যাত্রীরা হুইল চেয়ার ব্যবহার করলে ভাড়া ১৫ টাকা, আর কুলির সাহায্য নিলে ২০ টাকা। অথচ অসুস্থ্ যাত্রীরা হুইল চেয়ার ব্যবহার করলে কুলিরা নিচ্ছে একশত থেকে দুইশত। আবার অনেক সময় খুশি হয়ে অনেকে ঈদের সময়ে ৫শত থেকে ১হাজার টাকাও দেন।
কথা হয় স্টেশন মাস্টার মোহম্মদ আমিনুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, যদি কোন কুলির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে সেই কুলিকে স্টেশন থেকে বের করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, ইতোপূর্বেও কয়েকজন কুলিকে অসদাচরণের জন্য বের করে দেয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :