শিরোনাম
◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ০৭:১৪ সকাল
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ০৭:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অনুগল্প : দাগ

গৌতম সাহা : ‘রসগোল্লা, সাদা না গুড়ের কোনটা আছে নবীনদা?’ -‘সাদা বড় আর গুড়ের ছোট। বড় দুটোই আছে। কোনটা দেবো?’ -‘আচ্ছা, তাহলে সাদা বড়টাই দিন, দশটা। আর এগুলো কী?’ বাবার রাতে রসগোল্লা ছাড়া চলে না, সেটাই দিতে বলে স্টীলের ট্রেতে রাখা পায়েসের মধ্যে গোল গোল নতুন ধরনের একটা মিষ্টির কথা জিজ্ঞেস করলাম নবীনদাকে। ‘রাধাকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভা-ার’ আমাদের এই শহরের প্রাচীন এবং নামকরা মিষ্টির দোকান। বাবার সময় থেকে নবীনদা আমাদের পরিবারকে চেনেন। বাবা নবীন বলে ডাকলেও আমি কিন্তু কাকা না বলে নবীনদাই বলি। -‘এটা বেকড্ রসগোল্লার পায়েস, টেস্ট করাচ্ছি তোমায়, দাঁড়াও’, বলেই শালপাতার ছোট প্লেটে ওই গোল বেকড রসগোল্লার একটা বল আর সাথে খানিকটা পায়েসের ক্ষীর তুলে আমার হাতে দিলেন ষাটোর্ধ নবীনদা। -‘অপূর্ব!’ সত্যি বলতে কী, এতোটাই সুন্দর তার স্বাদ যে, মুহূর্তের জন্য চোখটা প্রায় বুজেই এসেছিলো। -‘আমায় এই লর্ড চমচম ছ’টা দেবেন কাকু’।

রিনরিনে এক মিষ্টি মেয়ের কণ্ঠ যেন সেই বেকড্ রসগোল্লার পায়েসের সুমিষ্ট স্বাদের মতোই কানে প্রবেশ করলো। আমার বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। বাড়িতে বৌ, ছেলে আর মেয়ে আছে। কোনোকালে হয়তো সুপুরুষ ছিলাম। আজ তাড়াতাড়ি পেকে যাওয়া চুলে সেই সুপুরুষ চেহারা কবেই ঢাকা পড়ে গেছে! মনটা কিন্তু এখনো আমার কিছুতেই নিজেকে চল্লিশোর্ধ্ব, পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বলে মেনে নিতে পারে না। স্টেশনের ওভারব্রীজের উপর অফিস টাইমে কমবয়সী কোনো ছোকরা যদি হঠাৎ বলে ওঠে, ‘কাকু ডাউন ট্রেনের কোনো খবর হলো?’

মাথায় আমার এখনো আগুন জ্বলে গিয়ে দপ করে নিভে যায়। ভাবি, ‘কাকু হয়ে গেলাম! কবে? টেরই পেলাম না? এর কয়েকদিন পরে জেঠু! তারপর দাদু!’ কিন্তু ভেতরে ভেতরে বুড়িয়ে যাবার এই তীব্র শঙ্কা নিয়েও কিন্তু এখনো আমি প্রেমে পড়ি! রাস্তায় চলতে চলতে সদ্য শাড়ি পরা কোনো অষ্টাদশীর গালের টোল পড়া দেখে, এমনই কোনো সদ্য কলেজের গ-ি পেরিয়ে ইউনিভার্সিটির চৌকাঠ পার হওয়া যুবতীকন্যার অপরূপ কণ্ঠে ‘সাইয়া যব গয়ে পরদেশ’ শুনে, কখনো বা এমনই কোনো চন্দনকাঠরাঙা কপালের ঠিক মাঝখানে একটা ছোট্ট কালো টিপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মনে মনে প্রেমে পড়ে যাই! ফিদা হয়ে যাই! তাই বলে প্রেম নিবেদন করে বসি বলে ভুল করবেন না! সেই পরিমিতিবোধ আমার আছে।

কোনোকালেই আমি ডাকাবুকো সাহসী প্রেমিক নই। ওই যাকে বলে চুপি চুপি ভালোলাগা, সেই ভালোলাগাকে নিয়েই দুএক ছত্র পদ্য লেখা, এই আর কী! জানি, মেয়েরা এইরকম ভীতু ভীতু প্রেমিক পছন্দ করে না। না হলে শর্মিকে যেই মনে মনে একটু করে নিজের করে ভাবতে শুরু করে স্বপ্নের জাল বুনছি, ঠিক সেই সময়েই...যাক গে, সে-গল্প অন্য কোনোদিন করা যাবে। এখন যা বলছিলাম তাই বলি। কতো বয়স হবে মেয়েটার? আঠারো, উনিশ? হয়তো বা আর এক দু’বছর এদিক-ওদিক! কারো কারো কণ্ঠস্বরের সাথে চেহারার একদম মিল হয় না। কখনো বা ঠিক এর উলটো হয়। এখানে যেন একটু বেশি রকমের উলটো! এতো নিষ্পাপ মুখ হতে পারে? এতো স্নিগ্ধ! ঘুম থেকে ওঠার পরে কোনো অষ্টাদশী নারীর মুখে যে এক নির্লিপ্ত পবিত্রতা মাখামাখি হয়ে থাকে, এই মুখ সেইরকম পবিত্রতা মাখা। আমি অপলক তাকিয়ে রইলাম সেই মুখের অপার সৌন্দর্যের দিকে। কয়েক মুহূর্ত-‘এই মিষ্টিটা কতো করে কাকু?’

নিজের হাত দিয়ে মিষ্টির শো কেসের কাচের ওপর দিয়ে একটা বিশেষ মিষ্টির দিকে দেখালো সেই পরমা। তখনই চোখে পড়লো দাগগুলো। কব্জির এক ইঞ্চি উপরের দিকে হাতের ত্বক থেকে একটু হালকা উঠে থাকা আড়াআড়ি প্রায় দুই ইঞ্চি মাপের একটা দাগ। আধ ইঞ্চি উপরে আরো একটা। কবজি থেকে বেশ খানিকটা উপরে উঠে থাকা কামিজের হাতা-অবধি এইরকম পাঁচ-ছটা দাগ! মনটা কীরকম যেন করে উঠলো। এই দাগ আমি চিনি, বুকের ঠিক মাঝখানে এইরকম দাগ আমারো আছে। সাদাটে হয়ে যাওয়া দাগগুলো দেখলেই আমার রক্তে ভেসে যাওয়া হাতের দুই আঙুলের ফাঁকে শক্ত করে ধরা একটা ছোট্ট ধাতব টুকরোর নিষ্ঠুর তীক্ষèতা দেখতে পাই। আর এখনো অনুভব করি, সেই সময়ের মনটাকে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে দেহ, কিন্তু রক্তপাত হচ্ছে বুকের ভেতর। এক তীব্র কষ্টে কেঁদে ভেসে যাচ্ছে হৃদয়! বলতে ইচ্ছে করলো, ‘এই মেয়ে, এরকম করতে নেই রে, সারাজীবনের জন্য নিজের শরীরে ভালোবাসার এই ক্ষতচিহ্ন আঁকতে নেই, কোনো লাভ হয় না। কেউ বুঝবে না এই দাগের প্রতিটা টানে কতো কান্না মিশে আছে। শুধু শুধু লোকের চোখে নিজেকে হেয় প্রমাণিত হতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে সারাজীবন, অযাচিত প্রশ্নের অনিচ্ছুক উত্তর দিতে হবে! কিছু লাভ নেই এই ক্ষতচিহ্নের’। বলতে পারলাম না, বলা যায় না বলেই বললাম না হয়তো। চলে গেলো ঘুমভাঙা চোখের সেই নারী। নবীনদার হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা নিয়ে বাইরে ফুটপাথে এসে দাঁড়ালাম। হঠাৎ মনে এলো, ‘আচ্ছা, এই মেয়েটির দাগ তো বাইরে থেকে দেখা গেলো! বাইরে থেকে দেখা যায় না এমন দাগ নেই? অনেকেরই তো আছে সেই দাগ। যাদের এই ক্ষতচিহ্ন শরীর ছাড়া অন্য কোথাও গ্রথিত হয়ে আছে তাদের ক্ষেত্রে কী হয়? সেই দাগ কি মেটে? সারাজীবনে?’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়