শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ০৬:১৫ সকাল
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ০৬:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুর্নীতির খনি ওয়াসা!

>> প্রকল্প কাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম>>>>>>>>> দুর্নীতি পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনে>> ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি:>> ওয়াসা কর্মচারীদের ওভারটাইম বিল সংক্রান্ত দুর্নীতি:>> ওয়াসা কর্মচারীদের ওভারটাইম বিল সংক্রান্ত দুর্নীতি:

 

ডেস্ক রিপোর্ট  : ঢাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ওয়াসার কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের ডজনখানেক প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুদক।

এসব উন্নয়ন প্রকল্পসহ সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির ১১টি উৎস চিহ্নিত করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

এসব দুর্নীতির উৎস বন্ধে ১২টি সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে দুদক। বৃহস্পতিবার দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

দুর্নীতির উৎস:

 

এ প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওয়াসার প্রকল্পের কাজ শেষ না করে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ও ব্যয় বাড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকসহ তা বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থাকেন।

# সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার (ফেইজ-৩) প্রকল্প: ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য চার হাজার ৫৯৭ কোটি ব্যয়ে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এ প্রকল্পের কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

# ‘ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পানি সরবরাহ’ ব্যবস্থা অটুট রাখতে প্রতিদিন ৪০ কোটি লিটার অতিরিক্ত পানি সরবরাহ করার জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুনর্বাসনের ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদী ২৫২ কোটি টাকার প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

নির্ধারিত সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ না করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রকল্প পরিচালকসহ তা বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

# ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প: ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পাঁচ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা। এ প্রকল্পে ২৩৮ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৮ শতাংশ।

# দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প: রাজধানীর গুলশান, বনানীসহ অন্যান্য এলাকায় পয়ঃবর্জ পরিশোধনের জন্য ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা। এখন পর্যন্ত ১০১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কাজের অগ্রগতি একেবারেই নগন্য।

# ঢাকা মহানগরীর আগারগাঁও এলাকায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প: প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

# ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প: তিন হাজার ১৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই। কিন্তু ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে।

# মিরপুরের ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা হ্রাসকরণ প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫২১ কোটি টাকার এ প্রকল্প ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না করে অযৌক্তিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় আরও ৫২ কোটি টাকা বৃদ্ধি ও সময় বাড়ানো হয়।

# পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ (ফেজ-১) প্রকল্প: মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর তীরে যশলদিয়ায় পানি শোধনাগার নির্মাণের মাধ্যমে পুরাতন ঢাকা শহরের মিটফোর্ড, নবাবপুর, লালবাগ, হাজারীবাগ ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য তিন হাজার ৫০৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্পটির কাজ ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলে তা সমাপ্ত হয়নি।

>> দুর্নীতি পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনে

বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনের বিষয়ে দাতা সংস্থার গাইডলাইন ও ঋণ চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে পরামর্শক ও ঠিকাদার নির্বাচনের বিষয়ে এমন কিছু শর্তারোপ করা হয়, যাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ঠিকাদার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘সিন্ডিকেট পদ্ধতি ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং কাজ পাওয়ার বিনিময়ে ঘুষ লেনদেন’ বর্তমানে একটি প্রচলিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দুদকের পর্যবেক্ষণ।

সংস্থাটি বলছে, এই কারণেই স্পেশিফিকেশন ও ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্প কাজ যথাসময়ে শেষ হয় না এবং প্রকল্পের ব্যয়ভার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।

>> ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি:

ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ওয়াসা এখনও ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করায় প্রকৌশল ও রাজস্ব শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্ত/কর্মচারীরা মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন, যার মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।

>> ওয়াসা কর্মচারীদের ওভারটাইম বিল সংক্রান্ত দুর্নীতি:

ঢাকা ওয়াসায় পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ওয়াসার বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারীদের তাদের নির্ধারিত কার্য সময়ের বাইরে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের ওভারটাইম বিল দেওয়া হয়, যা তাদের মূল বেতনের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ।

অনেক ক্ষেত্রে কিছু প্রভাবশালী কর্মচারী ওভারটাইম না করেও ওয়াসার কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ওভারটাইম বিল উত্তোলন করেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ঢাকা ওয়াসার কর্মচারীদের ওভারটাইম বিল অনেক বেশি।

 

দুর্নীতি রোধে সুপারিশ

ঢাকা ওয়াসার চলমান প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ অপচয় রোধে বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থাকে দিয়ে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে যৌথ পরিমাপ টিম ও মনিটরিং টিম গঠন করার সুপারিশ করেছে দুদক।

এছাড়া প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরির সময় কাজের যথার্থতা ও উপযোগিতা আছে কি না তা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করা, দরপত্র মূল্যায়নে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক শক্তিশালী টিম গঠন করা, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের সময় ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার প্রকল্প পরিদর্শন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন, ঠিকাদারকে বিল পরিশোধের আগে দরপত্রের শর্তানুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে কি না তা যাচাইয়ের মাধ্যমে যৌক্তিক বিল পরিশোধ করতে সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন, মিটার রিডিং ও রাজস্ব আদায়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মিটার রিডিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা, অবৈধ ওভারটাইম বিল রোধ করে জনবল কাঠামো সুনির্দিষ্ট করা, প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা ওয়াসার কাজের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান (ঢাকা সিটি করপোরেশন, সওজ, বিদ্যুৎ বিভাগ) সমন্বয় করারও সুপারিশ করা হয়।

অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির লক্ষ্যে গণমাধ্যম, দুদক, অডিট ডিপার্টমেন্টসহ নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়।

ওয়াসার দুর্নীতি প্রতিরোধে সেবা গ্রহীতাদের নিয়ে গণশুনানির আয়োজন, মেগা প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় বিভিন্ন প্রকৌশলী সংস্থার বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত সার্ভিলেন্স টিমের আকস্মিক অভিযান পরিচালনা এবং বিভিন্ন কেনাকাটায় অভিজ্ঞ সিনিয়র কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

দুদকের একটি টিম বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে জানিয়ে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারের প্রতিটি সংস্থাকেই সমন্বিতভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। এ জাতীয় প্রতিবেদন মূলত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি প্রতিরোধে আরও সংবেদনশীল করে তুলবে।”

কমিশনের এই কাজের প্রশংসা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্নীতি দেশের অর্থনীতিসহ সকল প্রকার অগ্রযাত্রার প্রতিবন্ধক। তাই মন্ত্রণালয়ের কোনো স্তরেই দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না।”

তিনি বলেন, “কমিশনের এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে কর্মকর্তার কোনো প্রকার গাফিলতি কিংবা শৈথিল্য আছে কি না তা চিহ্নিত করা হবে এবং সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

সূত্র- বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়