শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাননীয় সংসদ সদস্য, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে ছেলেমেয়েরা প্রেম করবে না তো, কখন করবে? বুড়ো বয়সে?

ফরিদ কবির : জনাব একরামুল করিম চৌধুরী, এমপি, নোয়াখালী -৪, জাতীয় সংসদ ভবন, ঢাকা। মাননীয় সংসদ সদস্য, পৌরপার্কে বসে থাকা কিছু নবীন প্রেমিক-প্রেমিকাকে পাকড়াও করে দারুণ একটা কাজ করেছেন আপনি। কলেজ ফাঁকি দিয়ে প্রেম করা আপনার পছন্দ হয়নি বুঝতে পারছি। তাদের ধরে আপনি হাজতে পাঠিয়েছেন বলে খবরে জেনেছি। ধরা খাওয়া তরুণ-তরুণীরা ‘আর কখনো প্রেম করবে না’ বলে নাকে খৎ দিয়েছে বলেও শুনেছি। তাদের অপরাধ এতোই বিশাল যে আপনি আইনপ্রণেতা হলেও নিজেই আইন রক্ষার খাতিরে তাদের ধরতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের বাবা-মার কাছে নালিশও করেছেন!

সম্মানিত সংসদ সদস্য, আমি বুঝতে পেরেছি, দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে যখন আপনাদের মাথার ঘাম পায়ে গড়াচ্ছে তখন এসব তরুণ-তরুণীরা আপনাদের সিমেন্টের বস্তা কাঁধে না নিয়ে অকাজে সময় নষ্ট করছিলো! এটা আপনার পছন্দ হওয়ার কথা নয়। এটা আমারও পছন্দ হয়নি, মাননীয়। আওয়ামী লীগ দেশে উন্নয়নের যে জোয়ার সৃষ্টি করতে চাইছে, সেখানে তরুণদের এমন অনুৎপাদনশীল কাজ মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু মাননীয়, আপনার কি মনে হয় না, অলস তরুণ-তরুণীদের প্রেমের কারণে উন্নয়ন যতোটা না বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তার চাইতে ঢের বেশি হচ্ছে দুর্নীতির কারণে? প্রেম করা আসলে অপরাধ নয়, দুর্নীতি করা, খাবারে ভেজাল মেশানোই অপরাধ। অপরাধ এবং উন্নয়নের পথে বাধাও। আপনিই বলেন, এমন কোন্ মন্ত্রণালয় বা প্রকল্প আছে, যেখানে এক টাকার জিনিস কিনতে লাখ টাকা খরচ হয় না! সরকারি টাকা কীভাবে অকাতরে খরচ হয়, কীভাবে অপচয় হয় আপনি নিশ্চয়ই জানেন। কয়েকদিন আগে পত্রিকার এক রিপোর্ট থেকেই আমরা জেনেছি, একটা বালিশ নিচতলা থেকে পাঁচ তলায় তুলতে কোনো এক প্রকল্পে খরচ হয়েছে কয়েক হাজার টাকা! এটা শুধু নির্দিষ্ট সেই প্রকল্পে নয়, সব প্রকল্পে, সব মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনি যে চেয়ারে বসেন, সেটার দাম হয়তো ১২ হাজার টাকা। কিন্তু তা হয়তো কেনা হয়েছে ৪২ হাজারে। কিংবা এক লাখ ১২ হাজারে! আপনিই বলেন, এমন কোন্ প্রকল্প আছে, কোন্ মন্ত্রণালয় আছে যেখানে এক ফোঁটাও দুর্নীতি হচ্ছে না? জানি বলতে পারবেন না। আমাদের ফলে ভেজাল, দুধে ভেজাল, মাছে ভেজাল। আমাদের মশার ওষুধেও ভেজাল। কই, কোনো সংসদ সদস্যকে তো দেখি না, ভেজালকারীর হাত ধরতে, দুর্নীতিবাজের হাত ধরতে?

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ শুরু করেছেন সেখানে তার পাশে আপনাদের কাউকেই তো সেভাবে দাঁড়াতে দেখি না! তিনি সেখানে প্রায় একাই। একা একা তার পক্ষে সমাজের শিকড়ে-বাকলে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতি দূর করা একেবারেই অসম্ভব। আর তার ফলে কাক্সিক্ষত উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। আমরা এমন দৃশ্য দেখতে চাই যেখানে আপনি, আপনারা দুর্নীতিবাজ ও ভেজালকারীদের এভাবে হাতেনাতে ধরছেন। আর জেলে পুরছেন। তাহলে আমাদের দিন ফিরলেও ফিরতে পারে। মাননীয় সংসদ সদস্য, আপনার যেখানে দুর্নীতিবাজ ও ভেজালকারীদের নোংরা হাত ধরার কথা, সেখানে আপনি ধরছেন প্রেমিক-প্রেমিকাদের নরম হাত! আমি বিশ্বাস করতে চাই, এ ভুলটি বোঝার পর আপনার অনুশোচনা জাগবে এবং আপনি কোনো মহৎ কাজে এগিয়ে আসবেন। শেষে বলি, আমাদের জনগণের বেশিরভাগ মানুষেরই হৃদয় ভরে আছে অপ্রেম ও ঘৃণায়। হিংসা ও বিদ্বেষে। তাদের মধ্যে প্রেম জাগিয়ে তোলাটাই আসল কাজ। আমি তো মনে করি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের ফাঁকে শ্রেণিকক্ষে বসে প্রেম করার জন্যই ছেলেমেয়েদের অন্তত এক ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা উচিত।

মাননীয় সংসদ সদস্য, আমাদের সময়ে আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে বাবা-মার ভয়ে ঠিকঠাকমতো প্রেম করতে পারিনি। অনুমান করি আপনিও পারেননি। কী জানি, তখন প্রেম করা অপরাধের বিষয় ছিলো কিনা। কিন্তু এখন সেদিন আর নেই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে ছেলেমেয়েরা প্রেম করবে না তো কখন করবে? বুড়ো বয়সে? আমি তো বলবো, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আরও অনেক পার্ক গড়ে তোলা দরকার। সম্ভব হলে প্রেমে উৎসাহিত করতে ছেলেমেয়েদের দেয়া দরকার বিশেষ প্রণোদনা ভাতা। যাতে পার্কগুলো থাকে সবসময় প্রেমমুখর। আমি নিশ্চিত যে তরুণ প্রেমিক হবে, তার পক্ষে আর যাই হোক জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হওয়া সম্ভব নয়। তার নিদেন পক্ষে আমার মতো ফরিদ কবির হওয়া সম্ভব। হওয়া সম্ভব আপনার মতো সংসদ সদস্যও। একবার মানুষের প্রেমে পড়তে জানলে দেশের জন্য প্রেম জাগলেও জাগতে পারে। যে মানুষকে ভালোবাসতে শেখেনি, সে দেশকে ভালোবাসবে কীভাবে? আপনি আমার শুভ কামনা ও ভালোবাসা জানবেন। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়