শাহীন খন্দকার ও মামুনুর রশীদ : নোয়াখালী জেলা শহরের ডিসি পাকের্র সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে ডিসি পার্কে সামনে সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী আসার পথে সাংসদের দৃষ্টিতে আসে পার্কের ভিতরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্লাশ না করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডারত অবস্থায় তিনি তরুণ-তরুণীদের পুলিশে সোপর্দ করার সংবাদটি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনায় পড়েন নোয়াখালী সদরের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।
এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে ডিসি পার্কে পুলিশ নিয়ে অভিযানে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য। সেই সাথে সাংসদ শিক্ষার্থীকে আটকসহ তাদের অভিভাবকদের ডাকেন থানায়। সাংসদের এই উদ্যোগকে অভিবাবকসহ এলাকাবাসী স্বাগত জানিয়েছেন।
এদিকে পার্কে নিজের অভিযানের ছবি তিনি প্রকাশ করেন ফেইসবুকে। তাতে তিনি লেখেন, স্কুল-কলেজ চলাকালীন এই শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কে ঘোরাঘুরি করছিল।
সন্তানের খবর নিতে অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি লেখেন, “স্পষ্টভাবে বলছি, স্কুল-কলেজ চলাকালীন কোনো শিক্ষার্থী পার্কে ঘুরাঘুরি করলে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে শাস্তি প্রদান করবে।”
একরাম চৌধুরী ফেইসবুক স্ট্যাটাসের পর ফেইসবুকে চলছে তার সমালোচনা।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম ফেইসবুকে লিখেছেন, “প্রেম করা কি বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ?”
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশী লিখেছেন, “কলেজ-ভার্সিটির ছেলে মেয়েরা পার্কে যেয়ে বসলে,পার্কের সুস্থতা বাড়বে। অন্তত গাঞ্জাখোর, ইয়াবাখোরগুলো একটু অস্বস্তিবোধ করবে। পারলে সর্বত্র এদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করেন! স্যার,পার্কে সবাই প্রেম করতেই যায় না।
এদিকে নোয়াখালীর স্থানীয়বাসিন্দারা এবং অভিবাবকরা সাংসদের এই উদ্যোগে খুশি। তারা জানান সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধুত্বের আড্ডার নামে দীর্ঘদিন যাবত চলছে অশালিন সব আচরণ! “পার্কে থাকা এসব ছেলে-মেয়েদের কেউ কিছু বলতেও সাহস করে না,মান সম্মানের ভয়ে শুধু নয় জীবনের মায়াতে ও ! কারণ এরা বেপোরওয়া জীবন যাপন করে ফলে অভিবাবকরাও এখন নিরুপায়!
পুলিশ দিয়ে ধরে, ভ্যানে তোলার পাশাপাশি তাদের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়াতে ভালোই হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। মাহবুব খান প্রশ্নে বলেন, ফেইসবুকে যারা সাংসদের উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা করছেন, কোন ক্ষমতায় বা আইনে? আপনাদের মতো বেকুব লোকজনকে কী করে যে সব মন্তব্য করছেন ?” আমি বলবো এরা যুব সমাজের দেশের ভালো চায় না।
অভিভাবকরা খুশি: সাংসদ একরাম চৌধুরী ফেইসবুকে আলোচনার মধ্যে সংসদ সদস্য একরাম চৌধুরী বলছেন, সৎ উদ্দেশ্যেই তিনি ওই অভিযানে গিয়েছিলেন এবং এতে অভিভাবকরা খুশি। তিনি বলেন, “ প্রায়ই দেখি ওই পার্কে শিক্ষার্থীরা জুটি বেঁধে আড্ডা দেয়। অভিভাবকরা ফোন করে, ফেইসবুকে ইনবক্সে আমাকে বলেছে- আমরা দেশে নেই, আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। আমার কাছ থেকে সহযোগিতা চায়। চারদিক থেকে আমার কাছে পরামর্শ আসে।
গত ছয় মাস থেকে আমি এখনাকার গার্লস কলেজ, স্কুলের সামনে থেকে বখাটেদের আড্ডা বন্ধ করেছি। কিন্তু বখাটে ছেলেগুলো এখন বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেসহ এ পার্কের মধ্যে চলে এসেছে।”ওই পার্কের বাইরে সাইনবোর্ডের কথা তুলে ধরেন তিনি, জেলা শহরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের ওই পার্কের ফটকে লেখা রয়েছে-“শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষেধ’। পুলিশের অভিযানে আটকের সঙ্গে নিজের পার্কে যাওয়ার ঘটনা ভিন্ন বলে দাবি করেন একরাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “পার্কে ওই দিন এ রাস্তা ধরে আমি সকালে এসপি অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম। একই দিন পুলিশ এ ধরনের বখাটেদের ধরে ভ্যানে করে নিয়ে যায়। সেটা ভিন্ন। আমি যাওয়ার সময় দেখলাম দুটো জুটি কলেজের সাদা ড্রেস পড়া; ওরা ওপেনলি যে আচরণ করছে, তা আমার কাছে শোভন মনে হয়নি। এটা দেখে আমি গেটের সামনে নামি। “আমাকে দেখে একটি জোড়া দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেছে। মেয়েটাকে বললাম-যাও চলে যাও। পরে ছেলেটাকে বললাম-এ সময়ে এখানে কেন? তোমরা কোথায় পড়ো ? মেয়েটা আমাকে বলেছে নোয়াখালী কলেজে পড়ে। পরে জেনেছি সে অন্য কোথাও পড়ে। ছেলেটাকে বললাম, তুমি কোথায় থাক, তোবার বাবার মোবাইল নম্বর দাও। না হলে অসুবিধা হবে। কলেজ টাইমে তুমি এখানে কেন ? তোমরা ওপেনলি এখানে বসে এ ধরনের কার্যক্রম কেন করছ? তখন সেটা সরি বলে জানিয়েছে, কলেজ টাইমে এখানে আর আসব না ভাইয়া। আমি ওদেরকে পুলিশে দিইনি।” নিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে তিনি বলেন, “দিলাম এ জন্য যে এটা দেখে নোয়াখালীর গার্ডিয়ানরা সতর্ক হবে; তাদের সন্তানের বিষয়ে সতর্ক হবে।” সমালোচনার বিষয়ে একরাম চৌধুরী বলেন, “এটার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথ হচ্ছে। আমি তো এর উত্তরও দিচ্ছি না; এটা নিয়ে কথা বলছি না। আমার বিবেক মনে করছে, আমি ওই দিন কাজটা সঠিক করেছি। একজন সাংসদ যখন এ ধরনের কাজ করে, তখন মানুষের টনক নড়ে। আর “যারা মনে করছে আমি ভালো করিনি; তারা তাদের বক্তব্য দিচ্ছে। তারা তাদের বিবেক থেকে করছে। আমার বিবেকের তাড়নায় আমি এটা করেছি, এটা সঠিক ছিল।”
পত্রিকাতে নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক একজন বলেন “শুনেছি নিজের ছেলে রাস্তায় পথচারী চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে এ বিষয়ে তিনি কি উদ্যোগ নিয়েছেন ? ২০ লাখ টাকায় সেইসব অপরাধ ধামাচাপা না দিয়ে ছেলেকে জেলে পাঠান, দেখি কত বড় আইনের ফেরিওয়ালা আপনি।” এই অভিযান নিয়ে আবার অনেকে সাংসদের প্রশংসাও করেছেন ফেইসবুকে।
আবিদ খান’বলেছেন,“নিঃসন্ধেহে প্রংসনীয় কাজ! কঠোর না হলে এদের কন্ট্রোল করা যাবেনা। প্রেমের নামে কলেজ ফাঁকি দিয়ে পার্কে গিয়ে নোংরামি করছে।”
নোয়খালীর গুড্ডু তিনি লিখেছেন সাংসদ একরামুলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, “ওনার মত যদি সকল জনপ্রতিনিধিগন এমন সামাজিক দায়িত্ব নিতেন, তাহলে বাংলাদেশে মাদক, ইভটিজিং, ধর্ষণ আর থাকত না। ”
‘রাশেদ চৌধুরী’ বলেছেন, যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে উনি নিজেই সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে আসেন । সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে যারা আজ সাংসদকে নিয়ে সমালোচনা করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি এ প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার সাংসদ রাখেন ।”
সামিয়া হক নোয়াখালী সরকারী কলেজের ছাত্রী তিনি আমাদের নতুন সময় পত্রিকাকে জানিয়েছেন নোয়াখালীবাসী আমরা জানি এই পদক্ষেপ ভালো না খারাপ। যারা জানেন না এই পার্ক সম্পর্কে তারা এসে দেখে যাবেন।” এর পরে সাংসদের এউদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা করবেন।
আপনার মতামত লিখুন :