মুসবা তিন্নি : ১২ই জুলাই সন্ধ্যায় ভারতের ঝাড়খণ্ডের হিন্দু ধর্মাবলম্বীর এক কলেজ ছাত্রী রিচা প্যাটেলকে মুসলিম ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। শাস্তি হিসেবে পাঁচটি কোরআন কিনে একটি ইসলামিক সংগঠনে গিয়ে বিলি করতে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যের একটি আদালত । তবে এখন তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
নতুন আদেশে আদালত জানিয়েছে, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মানিশ কুমার সিং জামিনের শর্ত থেকে কোরান বিলি করার শর্তটি বাতিল করেছে। আদালত বলেছে, ১৫ই জুলাই মঞ্জুর করা জামিন আবেদনে কোরআন বিলি করার যে শর্তটি জুড়ে দেয়া হয়েছিল তা পালন করার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যার কথা জানিয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। রাজ্য তার অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটরের মাধ্যমে আদেশটি পরিবর্তন করতে আবেদন করে। ঐ আবেদেনের প্রেক্ষিতে পুরোনো আদেশ কিছুটা পরিবর্তন করে আদালতের আদেশ থেকে কোরআন বিলি করার শর্তটি বাদ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য শর্তাবলী একই থাকবে।
কী কারণে দেয়া হয়েছিল কোরআন বিলির সিদ্ধান্ত?
ওই ছাত্রীর একটি ফেসবুক পোস্ট মুসলিমদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত হেনেছে - এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ রিচা প্যাটেল নামের ওই ছাত্রীকে গ্রেফতার করে। পরে জামিনের শর্ত হিসাবে কোরআন বিলি করার নির্দেশ দেয় আদালত।
তবে মিজ. প্যাটেল বিবিসিকে বলেছেন, "একটা ফেসবুক পোস্টের জন্য অন্য ধর্মের একটি সংগঠনে গিয়ে কোরআন বিলি করার নির্দেশে আমার খুবই অস্বস্তি হচ্ছে। আদালতের নির্দেশকে সম্মান জানিয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা তো আমার মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে! আমি উচ্চতর আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছি।
রিচা প্যাটেল প্রশ্ন করেন "ফেসবুকে আমি আমার নিজের ধর্ম নিয়ে কিছু লিখতে পারব না? এ কোথাকার নিয়ম? তার জন্য আমার মতো একজন কলেজ ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হবে?
তার দাবি, যে ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করার জন্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল, সেটা তিনি 'নরেন্দ্র মোদী ফ্যানস ক্লাব' নামের একটা গ্রুপ থেকে কপি করেছিলেন। ওই পোস্টে ইসলাম-বিরোধী কোনও কথাই ছিল না বলেও তার দাবি।
মুসলমানদের সামাজিক সংগঠন 'আঞ্জুমান ইসলামিয়া'-র প্রধান মনসুর খলিফা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
তার অভিযোগ, রিচা প্যাটেলের ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ পোস্টের ফলে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের 'অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে'। এর ফলে সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
অভিযোগ পেয়ে ১২ই জুলাই সন্ধ্যায় রিচা প্যাটেলকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি সহ নানা এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ওদিকে আদালতে জামিনের আবেদন জানানো হয়।
রাঁচি সিভিল আদালতে জামিনের শর্ত হিসাবে বিচারক জানান যে রিচাকে পাঁচটি কোরআন কিনে আঞ্জুমান কমিটি আর গ্রন্থাগারে বিলি করতে হবে, আর সেই প্রাপ্তি স্বীকারের রসিদ আদালতে জমা দিতে হবে।
আঞ্জুমান ইসলামিয়ার প্রধান মি. খলিফা জানিয়েছেন যে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এখনও তিনি পাঁচটি কপি কোরআন পাননি রিচার কাছ থেকে।
তবে তার কথায়, পুলিশ এই অভিযোগ দায়ের করার পরে রিচা প্যাটেলের পরিবার আর সমাজের মান্যগণ্যরা তাকে অনুরোধ করেন যে মেয়েটির বয়স মাত্র ১৯ বছর, তাই ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবে যেন বিষয়টি মিটিয়ে নেন। তারপরেই রিচা প্যাটেলের জামিনের আর বিরোধিতা করেননি মি. খলিফা। বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :