আক্তারুজ্জামান : কেন উইলিয়ামসন, মার্টিন গাপটিল, জিমি নিশাম কিংবা ট্রেন্ট বোল্টের চেহারার দিকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন এক ধরনের হাহাকার। মরণ-পণ চেষ্টার একেবারে শেষসময়ে এসে জীবনতরী ডুবে গেলে এরকম হাহাকার তৈরি হয়। না হেরেও ফাইনাল ম্যাচের শিরোপা নিয়ে যখন প্রতিপক্ষ শিবির উল্লাস করে তখন সেটা দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও কিছু করার থাকে না। কেননা স্কোর বোর্ড বলছে তারা পরাজিত। আর কঠিন এই পৃথিবীতে পরাজিত মানুষদের কোনো ট্রফি নেই, ট্রফি থাকে না।
১২তম আসরে শিরোপা হারিয়ে নিষ্প্রাণ হাসি দিয়েই মঞ্চে উঠলেন ‘অবিচল জাহাজ’ খ্যাত উইলিয়ামসন। যাকে হাজার প্রতিকূল পরিবেশ কিংবা প্রতিকূল আবহাওয়াও টলাতে পারে না। এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে যখন নাটকীয়তা ভর করলো তখনও যেনো নিরুত্তাপ উইলিয়ামসন। সুপার ওভারে ম্যাচ গড়ানোর আগে মূল ম্যাচের শেষ ওভারের চতুর্থ বলেই তার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। যে বলের থ্রো থেকে ৪ রান পেয়ে এগিয়ে গিয়েছিলো ইংলিশরা আর শিরোপা রেস থেকে ছিটকে গিয়েছিলো বø্যাক ক্যাপসরা। শুধু তাই নয়, এর আগের আসরের ফাইনালেও অস্ট্রেলিয়াকে শিরোপা উৎসব করতে দেখে মাঠ ছেড়েছিলো তারা। ফরে কষ্টটা একটু বেশিই হচ্ছিলো তাদের।
মার্টিন গাপটিলের কথা বলতে গেলে চোখও ভিজে আসে। সেমিফাইনালে তার থ্রোতেই ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলো কিউইরা। আর ফাইনাল ম্যাচে গাপটিলের থ্রোতে বাই রান এলো ৪। আর হেরে গেলো দল। পুরো বিশ্বকাপে বারবার দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে নিজের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন গাপটিল। গতবারের আসরে যার ব্যাটে ছুরি চলেছিলো এবার আর সেটা হয়নি। কিন্তু পয়েন্টে ফিল্ডিং করে দলের অনেক রান বাঁচিয়েছেন। এরপর শিরোপা নিষ্পত্তির ম্যাচ শেষে হাটু মুড়ে বসে কাঁদতে দেখা গেলো তাকে।
বল হাতে আগুন ঝরলেও মুখে যার ভুবন ভোলানো হাসি লেগে থাকে সেই ট্রেন্ট বোল্টের দুঃখ নিয়ে হয়তো কোনো ট্র্যাজিডি লেখা হতে পারে। তাতে তার দুঃখ দূর হবে না। ম্যাচের শেষ ওভার কিংবা সুপার ওভার দুবারই কেন উইলিয়ামসন ভরসা করেছিলেন বোল্টকে। তিনি আস্থার প্রতিদানও দিয়েছিলেন ঠিকঠাকভাবে। কিন্তু হিরো বেন স্টোকসের বীরত্বে তাকে মনে রাখবে না পৃথিবী। কেননা কঠিন এই পৃথিবীতে হেরে যাওয়া মানুষদের গল্প বলা লেখা থাকে না। মহাকালের ¯্রােতে হারিয়ে যায় তাদের যুদ্ধের কথা। কিন্তু বোল্ট. উইলিয়ামসন কিংবা গাপটিলরা তো হেরে যায়নি। তবু তাদের জন্য কোনো ট্রফি রাখেনি নশ্বর এ পৃথিবী।
আপনার মতামত লিখুন :