নূর মাজিদ : যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাতের দুর্বলতা দেখা দিয়েছিলো ২০০০ সালের প্রথম দশকের প্রায় শেষদিকে। সেসময় ওয়াল স্ট্রীটের শীর্ষ ব্যাংক যেমন জেপি মরগ্যান চেজ অ্যান্ড কোং নিজেদের ঋণ ব্যবসার নতুন লাভজনক ক্ষেত্র খুঁজে বের করে। আবাসন খাতের ঝুঁকি এড়িয়ে কৃষি এবং এইখাত সংশ্লিষ্ট শিল্পখাতকেই লাভজনক ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যাংকটি। অবশ্য এর কারণও ছিলো। চীন তখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক মিত্র ও সহযোগী। দেশটির বাজারে বিপুল খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে প্রচুর নগদ অর্থের প্রয়োজন ছিলো। যা সরবরাহ করে নিজেরাও মুনাফার মুখ দেখেছে জেপি মরগ্যানের মতো ওয়াল স্ট্রিটের বৃহৎ ব্যাংকগুলো। তবে এই চিত্রটাই পাল্টে গেছে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে। সূত্র : রয়টার্স।
চলতি বছর মার্কিন কৃষিখাতের মোট দেনা ৪২ হাজার ৭শ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে, বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন কৃষি মন্ত্রণালয়। মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় করলে দেখা যায় এক দশক আগে দেনার পরিমাণ ছিলো ৩১ হাজার ৭শ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক দশকের ব্যবধানে কৃষিখাতে ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার কোটি ডলার বেড়েছে। ১৯৮০’র দশকের ফার্ম ক্রাইসিস বা কৃষি সংকট চলাকালীন সময়ের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে দেনার পরিমাণ, এমনটাই আশংকা কৃষি মন্ত্রণালয়ের।
কৃষি মন্ত্রণালয় এমন সময় এই আশংকা করেছে যখন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনে শস্য এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়েছে, নিজেদের আরোপিত বাণিজ্য শুল্কের কারণেই। যার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কারোপ করেছে চীন। এখানেই শেষ নয়, দেশটি ব্রাজিল, রাশিয়াসহ বিশ্বের অন্য বড় খাদ্য উৎপাদক দেশ থেকে আমদানির পরিমাণ বাড়িয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মার্কিন খামারগুলোর আয়ের ওপরে। এই অবস্থায় আর ঝুঁকি না নিয়ে নিজেদের বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে চায় জেপি মরগ্যান সহ ওয়ালস্ট্রিটের ব্যাংকগুলো। মার্কিন কৃষি ঋণ নিয়ে রয়টার্সের এক পর্যালোচনায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকগুলো ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স কর্পোরেশনের কাছে দাখিল করা নিজ নিজ কৃষি ঋণ প্রতিবেদনে এই ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা উল্লেখ করেছে।
শীর্ষ ৩০ মার্কিন ব্যাংকের ঋণ পোর্টফলিওগুলোয় দেখা গেছে, তারা এখন প্রদেয় ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। পূর্বের তুলনায় এই ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণের পরিমাণ কমেছে ৩৯০ কোটি ডলার। যা সাড়ে ১৭ শতাংশ কমেছে।