ইউসুফ আলী বাচ্চু : সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এবারে নির্বাচনে যে অনিয়ম হয়েছে, তা নির্বাচন কমিশনের ফলাফলে প্রমাণিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া কোনোমতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই অনিয়মের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া এবং নির্বাচন কমিশনের কাছেও বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
ফলাফলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয় রিটার্নিং অফিসারের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে। অথচ ভোটের পর রিটার্নিং অফিসাররা যে ফল দিয়েছিলেন তার সঙ্গে এবার নির্বাচন কমিশন যে ফল দিয়েছে তার মিল নেই বেশ কিছু কেন্দ্রে। এটা কীভাবে সম্ভব?’- এমন প্রশ্নও তোলেন বদিউল আলম মজুমদার।
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘আমরা নির্দলীয় সংগঠন। আমরা কোনো দলের পক্ষে বলছি না। আমরা এই দেশের জনসাধারণের পক্ষে। আমরা দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়া রক্ষা করার পক্ষে। কারণ, এই নির্বাচনি প্রক্রিয়াটা যদি ভেঙে যায়, তাহলে দেশে আর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার বদল হবে না। অশান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার বদল হলে তা সবার জন্যই অশনি সংকেত।’
তিনি বলেন, ‘এবার ১০৩টি আসনের ২১৩ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। ৫৮৭টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী ছাড়া কেউ ভোট পাননি। এর মধ্যে কেবল একটি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ভোট পেয়েছেন। অর্থাৎ ৫৮৬টি কেন্দ্রে কেবল নৌকার প্রতীক ভোট পেয়েছেন। ৬৮৫টি কেন্দ্রে ঐক্যফ্যন্টের প্রার্থী একটি ভোটও পাননি। বগুড়ার তিনটি আসন ছাড়া একটানা চারটি নির্বাচনে বিএনপি যে সব আসনে জিতেছে সেখানেও এবার তারা সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে ১৯.৪ শতাংশ।’
কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, ‘অতীতেও বাংলাদেশে অস্বচ্ছ নির্বাচন অনেক হয়েছে। ফলাফল নিয়ে অনেক গোঁজামিল আমরা দেখেছি। তবে এবার নির্বাচন কমিশন গোঁজামিলে না গিয়ে সোজামিলে চলে গেছে। সোজামিল শব্দটার অর্থ হলো শতভাগ। শতভাগের চেয়ে সোজামিল আর হয় না। এই যে সোজামিল ঘটনাটি ঘটেছে এটা মুক্তিযদ্ধের ভিত্তিতে ও রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সেজন্য নির্বাচন কমিশনের সোজামিল নিয়ে আমরা যে আলোচনা করছি তা মোটের ওপর অর্থহীন। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অন্য কোনো ব্যাপারে না হলেও এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। সহজে এই জিনিস কেউ ক্ষমা করবে না, আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।’
লিখিত বক্তব্যে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আগে থেকেই এই নির্বাচন নিয়ে যেসব অভিযোগ ছিলো, সেগুলো হলো- মনোনয়ন বাণিজ্য, নির্বাচনি প্রচারে বাধা, ঐক্যফ্রন্টের পোলিং এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বের করে দেয়া, আগের রাতে ব্যালট ভরা, কোনো কোনো কেন্দ্রে ১১টার মধ্যে ব্যালট শেষ হয়ে যাওয়া, দীর্ঘ সময় লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেতরে প্রবেশ না করা, জোর করে সিল দিয়ে নেয়া, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে ব্যবহার করা। তবে এবার কেন্দ্র ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে আরও বহু অনিয়ম ও অসঙ্গতি দেখা গেছে।’
তিনি বলেন, ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, যা কোনোমতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। ৭৫টি আসনের ৫৮৭টি ভোটকেন্দ্রের সব ভোট নৌকা প্রতীকের পক্ষে পড়েছে, যা অস্বাভাবিক। এমনকি মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে যে ভোটের ব্যবধান তাও স্বাভাবিক নয়। ব্যালট পেপারে ভোট ও ইভিএমে ভোট গণনার ফলাফলেও যে পার্থক্য দেখা গেছে, তাও গ্রহণযোগ্য নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন ও নির্বাহী সদস্য সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।সম্পাদনা: অশোকেশ রায়
আপনার মতামত লিখুন :