ছবি : দীপা ঘোষ
স্বপ্না চক্রবর্তী : রাজধানীসহ সারাদেশে পালিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের (হিন্দু) অন্যতম ধর্মীয় উৎসব জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব।
বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান রথযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হয় স্বামীবাগের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘে (ইসকন) মন্দিরে। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লাপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে উদযাপিত হয় এ উৎসব। এ দিন সকাল ৮টায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রথযাত্রা উৎসবের মূল আচার-অনুষ্ঠান। উৎসব উপলক্ষে দুপুরে মন্দির প্রাঙ্গনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
[caption id="attachment_921846" align="alignleft" width="500"] ছবি : দীপা ঘোষ[/caption]
মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরের সেবায়েত যশোদা নন্দন আচার্য্য। পরে সেখান থেকে বর্ণাঢ্য সাজে তিনটি বিশাল রথে জগন্নাথ দেব, সুভদ্রা ও বলরামের প্রতিকৃতিসহ শোভাযাত্রা বের করা হয়। রথের রশি ধরে টেনে নিয়ে চলেন ভক্তরা। ভক্তদের বিশ্বাস রশি টানলে তাদের আর পুনর্জন্ম হবে না। ইসকন মন্দির থেকে বের হয়ে রথযাত্রা জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন, প্রেস ক্লাব, হাই কোর্ট, দোয়েল চত্বর, রমনা কালিমন্দির, টিএসসি, জগন্নাথ হল ও পলাশী ঘুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। পুরোটা পথ নিরাপত্তার কঠোর বলয়ে মুড়ে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও তাঁতীবাজারে শ্রী শ্রী জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দিরেও রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
[caption id="attachment_921847" align="alignleft" width="500"] ছবি : দীপা ঘোষ[/caption]
উৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হওয়া উৎসবের প্রত্যাবর্তন হবে একাদশী তিথিতে।
কথিত আছে, আষাঢ় মাসের শুক্লা তিথিতে জগন্নাথ, তার ভাই বলভদ্র (বলরাম) ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে পুরীধামের মন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দিরে যান। সেখানে ৯ দিন অবস্থানের পর আবার পুরীধামে ফিরে আসেন। পুরীধামে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই উৎসব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এ বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমূর্তি রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
[caption id="attachment_921848" align="alignnone" width="649"] ছবি : দীপা ঘোষ[/caption]
ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) রথযাত্রা উপলক্ষে নয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠান মালায় রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন। ১২ জুলাই উল্টোরথে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম আবার ইসকন মন্দিরে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে শেষ হবে রথযাত্রা উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
আপনার মতামত লিখুন :